ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি)-এর নির্বাহী পরিচালক ও নগরবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বহুমাত্রিক প্রচেষ্টা লাগে। এসব মশার জীবনচক্র, ধরন জানা এবং সেই অনুযায়ী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটার জন্য কীটতত্ত্ববিদ প্রয়োজন। এর সঙ্গে উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ, ভূতত্ত্ববিদের পরামর্শ নেওয়া দরকার। এডিস মশা মারার ওষুধের মান যাচাইয়ের জন্যও একজন থাকা জরুরি। এসব ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করলে দীর্ঘমেয়াদে কোনও সমাধান আসবে না। বরং ডেঙ্গু আরও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই দেখছি সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অধিকাংশ সময় ওষুধ ছিটানো পর্যন্ত ছিল। কিন্তু এর সঙ্গে নগর পরিকল্পনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে কমিউনিটি পর্যায়ে অংশগ্রহণ জরুরি।
মশা নিধনে সরকারি-বেসরকারি অংশীজনদের সমন্বয়ে কাজ করতে হবে জানিয়ে কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, এখন তো ডেঙ্গু অনেক ছড়িয়ে গেছে। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা কুলাতে পারছে না। প্রত্যেক বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মশা নিধন কার্যক্রম এদের দিয়ে হয়তো সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সবারই কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় কাজ করছে, গৃহায়ণ ও গণপূর্তের যে প্রজেক্টগুলো আছে, সেখানে এডিস মশার প্রজনন যেন না হয় সেটা নিশ্চিত করতে পারে। রাজউক, ওয়াসাসহ যেসব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আছে, যে যার জায়গা থেকে এডিস মশা নির্মূলে কাজ করতে পারে। এছাড়া রিহ্যাবের কথা যদি বলি, তারা যে বিল্ডিংগুলো করছে সেখানেও কাজ করতে পারে। নির্মাণাধীন ভবনেও আমরা প্রচুর লার্ভা দেখি। এছাড়া মশা নিধনে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন কাজ করতে পারে। এভাবে নিশ্চিত করতে হবে এডিস মশার প্রজনন যেন না হয়।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, মশক নিধনে প্রত্যেক দিনই নতুন কিছু কনসেপ্ট আমরা নিয়ে আসতে চাচ্ছি। আমরা চেষ্টা করছি। এখন এমন কোনও দিন নাই যে আমাদের টিম বাইরে যাচ্ছে না। মশক নিধন টিম ছাড়াও আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং টিম, অন্যান্য টিম থেকে স্পেশালিস্টরা ডিএনসিসির ১০ অঞ্চলে গিয়ে লার্ভা পেলে জরিমানা করছে। আমরা কল সেন্টারের মাধ্যমে নগরবাসীকে বাসার আশপাশের কথা জানাচ্ছি, সতর্ক করছি। এছাড়া কীটবিদের পরামর্শ অনুযায়ী মশার ওষুধ দিচ্ছি। জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা, এসএমএস, মাইকিং, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সচেতন করা, জরিমানা, এগুলো চলতেই থাকবে।
তিনি বলেন, আমাদের টোটাল সিস্টেমের সঙ্গে আর কী কী সংযোজন বা নতুন কিছু কী করা যায় সেটা ভাবছি। আমরা কলকাতা ও মায়ামিতে দেখেছি মশা নিধনে তারা বিটিআই কীটনাশক ব্যবহার করে। আমরাও তা ব্যবহার শুরু করছি। এত কিছুর পরও মশা নিধনে গ্যাপটা কোথায় এটা আমারও প্রশ্ন। তাহলে নিশ্চয়ই আরও বেশি সচেতনতা বাড়াতে হবে, আরও বেশি জরিমানার দিকে ঝুঁকতে হবে। মানুষকে আরও সম্পৃক্ত করতে হবে, স্কুল-কলেজে, বাচ্চাদের আরও সচেতন করতে হবে।
মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং বাড়ানো হবে জানিয়ে মেয়র আতিক বলেন, আমি ইভিউলেশনের ওপর জোর দেবো। এই ইভিউলেশন সিটি করপোরেশনের কাউকে দিয়ে করাবো না। থার্ড পার্টি দিয়ে করাবো। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটবিদদের বলেছি এডিস মশার মৌসুমের আগেই লার্ভার উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করে দেবেন। জিআইএস ম্যাপের মাধ্যমে আমাদের মনিটরিং টিম গিয়ে সেগুলো ধ্বংস করবে। এরপর থার্ড পার্টির যে ইভিউলেশন টিম আছে তারা মনিটরিং করবে ধ্বংস হয়েছে কিনা। আরেকটি বিষয় আমার মাস্টারপ্ল্যানে আছে, ডিএনসিসির প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে কমিউনিটি ক্লিনিক করবো।