নাহিদ রানা, যার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার এখনও শুরুর পর্যায়ে। সিলেটে গত মার্চে অনুষ্ঠিত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে জাতীয় দলে তার অভিষেক হয়। দুরন্ত গতির ঝড় তুলে নিজের সামর্থ্য দেখিয়েছেন এই তরুণ পেসার। কিছুটা খরুচে হলেও, দুই ইনিংস মিলে নিয়েছেন ৫ উইকেট। এবার প্রথমবার দেশের বাইরে টেস্ট খেলার সুযোগ, পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে সুযোগ পেলে কাজে লাগাতে চান নাহিদ।
পাকিস্তানের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে একান্তে কথা বলেছেন নাহিদ রানা। জাতীয় দলের এই পেসার টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে নিজের ভাবনা, পাকিস্তান সিরিজসহ আরও বেশকিছু বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। যতদিন পারফর্ম করার শক্তি থাকবে এবং ফিটনেস ধরে রাখতে পারবেন, ততদিনই ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন ২১ বছর বয়সী এই পেসার।
ইনজুরি থেকে ফিরলেন, এখন কি অবস্থা?
নাহিদ রানা : গত মাসে একটু ইনজুরির সমস্যা ছিল, পরে আলহামদুলিল্লাহ ঠিক হয়ে গেছে। ইনজুরির সময় অনেক কষ্ট করেছি, সেটা রিহ্যাব বলেন কিংবা জিমে, সবকিছু মেইনটেন করা লাগছে আরকি। পরে শতভাগ ফিট হয়ে উঠেছি।
নাহিদ রানা : আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালোই হয়েছে ক্যাম্পে, নিজের দিক থেকে যা যা করার পরিকল্পনা সবকিছুর প্রিপারেশন নিয়েই পাকিস্তানে যাচ্ছি (দেশ ছাড়ার আগে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল)। এখন দেখা যাক সেখানে পৌঁছে আসলে ম্যাচে কি করতে পারি, আল্লাহ ভরসা। নিজের দিক থেকে অনুশীলনের কোনো ঘাটতি রাখিনি।
বোলিংয়ে নতুন কিছু আয়ত্ত করার চেষ্টা করছেন?
নাহিদ রানা : কাজ তো অবশ্যই করেছি। অনেকদিন পর আবার টেস্ট খেলতে নামব আন্তর্জাতিক ফরম্যাটে। লাল বলে নিজের সুইংটা আসলে কীভাবে বাড়ানো যায় সেটা নিয়ে কাজ করেছি। এছাড়া পুরাতন বলেও কীভাবে রিভার্স সুইং করা যায় সেটা নিয়েও কাজ করা হয়েছে।
দেশের বাইরে প্রথমবার খেলবেন, বাড়তি কোনো রোমাঞ্চ কাজ করছে কি?
নাহিদ রানা : না সেভাবে আসলে কাজ করছে না। জাতীয় দলে আসছি অনেকদিন হয়ে গেল। এর আগে কয়েকবার বিদেশ ট্যুর করেছি, স্বাভাবিক মনে হচ্ছে এবার। আর নিজের ভেতরে তাড়না থাকে যে, আমাকে ভালো কিছু করতে হবে। আমার প্রতি দলের যে চাহিদা সেটা যেন আমি পূরণ করতে পারি এটাই আমার লক্ষ্য থাকবে। আমি আমার সেরাটা দিতে চাই যাতে দেশের উপকার হয়। এ ছাড়া এরকম উত্তেজনা বা রোমাঞ্চ কাজ করছে না আসলে, এটাই সত্য।
নাহিদ বলেন, টেস্ট ফরম্যাটটা বেশ উপভোগ করছি। আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি– যে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারে সে তিন ফরম্যাটেই খেলতে পারবে। কারণ টেস্ট ক্রিকেটের ফিটনেস থাকলে বাকি দুই ফরম্যাটের ফিটনেসটা ঠিকভাবে থাকে। টেস্ট খেললে ক্রিকেট সম্পর্কে অনেক কিছু বোঝা যায়। সব সময় মাঠে থাকাসহ অনেক পরিস্থিতি আসে, এসব দিক থেকে উন্নতি হয় আরকি।
বাবর-রিজওয়ানদের মতো ব্যাটাররা থাকবে বিপরীতে, তাদের থামানোর পরিকল্পনা কী?
নাহিদ রানা : ক্যাম্পে এগুলো নিয়ে কাজ করা হয়েছে। তাদের জন্য তো আলাদা করে পরিকল্পনা রাখতেই হয়, আমিও সেটা রেখেছি। এর আগে যখন প্রথম খেলেছি তখন একটু আনইজি লাগতো। এখন তো অভ্যাস হয়ে গেছে, দিন দিন পরিণত হচ্ছি। আমার সামনে কোন ব্যাটসম্যান আছে এটা আসলে এখন দেখি না। আমি চেষ্টা করি নিজের ভালো বলটা করার জন্য। আমি ক্রিকেটারদের মুখ দেখে বোলিং করতে চাই না। এরকমই একটা মাইন্ড সেটআপ নিয়ে সবসময় মাঠে নামি।
পাকিস্তানের পিচ ব্যাটিং সহায়ক, ফলে বোলারদের জন্য উইকেট তোলা কঠিন হতে পারে কি?
নাহিদ রানা : দেখেন পৃথিবীর সব উইকেটেই কিছু না কিছু চ্যালেঞ্জ থাকবেই। সেই চ্যালেঞ্জটা জয় করতে পারলে আসলে সবকিছুই সফল হয় আরকি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি চ্যালেঞ্জ থাকা আসলেই ভালো, চ্যালেঞ্জ থাকলে নিজেকে অনেক ওপরে নিয়ে যাওয়া যায়।
সাধারণ মানুষের ধারণা আপনি শুধু গতি দিয়েই বোলিং করেন, এ নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কি?
নাহিদ রানা : হ্যাঁ অবশ্যই, ক্যাম্পে কোচরা ছিল তাদের সঙ্গে অনেক কাজ করেছি (নতুনত্ব আনতে)। এরপর জাতীয় দলের কোচও যারা আছেন, তাদের সঙ্গেও কাজ হয়েছে। প্রতিনিয়ত নিজের লক্ষ্যই থাকে কীভাবে আরও উন্নতি করা যায়, এটাই চেষ্টা থাকবে সবসময়।
টেস্ট ক্রিকেট কতটা উপভোগ করছেন, এখনকার সময়ে তো অনেক পেসার এই ফরম্যাট থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন…
নাহিদ রানা : আমার আলহামদুলিল্লাহ ভালোই লাগতেছে, বেশ উপভোগ করছি। আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি– যে ক্রিকেটার টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারে সে তিন ফরম্যাটেই খেলতে পারবে। কারণ টেস্ট ক্রিকেটের ফিটনেস থাকলে বাকি দুই ফরম্যাটের ফিটনেসটা ঠিকভাবে থাকে।
টেস্ট খেললে ক্রিকেট সম্পর্কে অনেক কিছু বোঝা যায়। সব সময় মাঠে থাকাসহ অনেক পরিস্থিতি আসে, এসব দিক থেকে উন্নতি হয় আরকি। দিনে তিনটা সেশন থাকে, কখনও একটি দল ওপরে থাকে, আবার কখনও অন্য দল সেটা ছাড়িয়ে যায়। সবমিলে একটা ভিন্ন মাত্রা যোগ করে ক্রিকেটে।
দেশের হয়ে কত টেস্ট খেলতে চান?
নাহিদ রানা : সত্যি কথা বলতে আমার আসলে এরকম কোন টার্গেট নাই। আমার লক্ষ্য হচ্ছে– আমি যতদিন ফিট থাকব এবং যতদিন পারফর্ম করতে পারব ততদিন খেলব। যখন মনে হবে যে পারফর্ম করতে পারছি না, আর ক্রিকেট খেলব না। যতদিন পারফর্ম করব ততদিন খেলে যাব, এটা আমার নিজের ভেতর আছে। যতদিন পারফর্ম করার শক্তি থাকবে এবং ফিট থাকব ততদিন ক্রিকেট খেলে যাব।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের এই সিরিজ আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম ম্যাচটি হবে ২১-২৫ আগস্ট। ৩০ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় টেস্ট হবে করাচিতে।