ডেস্ক নিউজ-
পেঁয়াজ আমদানির পর পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও বাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি। অন্যদিকে ভারত থেকে কম দামে পেঁয়াজ আমদানি করে দ্বিগুণ-তিন গুণ দামে বিক্রি করে মুনাফা লুটছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। ফলে আমদানির সুফল পাচ্ছে না ক্রেতাসাধারণ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের শুল্কসহ কেজিতে দাম পড়ছে ১৯ টাকা। সেই পেঁয়াজ দেশের খুচরা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ টাকা, খুচরা বাজারে যা সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থানীয়ভাবে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে- এমন চিত্র দেখাতে গিয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। প্রকৃত অর্থে বাজারে চাহিদা ও জোগানের ঘাটতি ছিল। কৃষি অর্থনীতিবিদ ও বিআইডিএসের সাবেক পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের ঘাটতি ছিল। এ কারণে দাম বেড়েছে। আর কৃষি মন্ত্রণালয় স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের যে চিত্র দিয়েছিল তা সঠিক নয়। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয় আমদানির অনুমতি (আইপি) দেওয়ার ক্ষেত্রে সময় ক্ষেপণ করেও বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে। নির্দিষ্ট সময়ে অনুমতি না দেওয়ায় ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়েছেন। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বেড়েছে, এমন তথ্যও সঠিক নয়।’ টিসিবির তথ্য মতে, গতকাল রবিবার বাজারে প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। দেশি বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গতকাল পর্যন্ত ৫৫১টি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার ৭০৬ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিপরীতে দেশে এ পর্যন্ত আমদানি পেঁয়াজ প্রবেশ করেছে ২৯ হাজার ৪২২ টন। এদিকে সম্প্রতি পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বেড়ে কেজিপ্রতি দাম উঠেছে ১০০ টাকায়। দামের লাগাম টানতে সরকার গত ৫ জুন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়। আমদানির খবরে পাইকারি বাজারে কেজিতে দাম কমে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। আর খুচরা পর্যায়ে দাম কিছুটা কমলেও এখনো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, গত দুই বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টনের মতো। চলতি বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। বর্তমানে মজুদ আছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে কারা পেঁয়াজ আমদানি করছেন, সীমান্তে পেঁয়াজের দাম কেমন পড়ে, আর দেশের বাজারে কোন দামে বিক্রি হচ্ছে এ পর্যায়গুলোতে সরকারের নজরদারি বাড়ানো গেলে পেঁয়াজের সঠিক মূল্য নিশ্চিত করা যাবে। খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়লে বেশি কেনার প্রবণতা বর্জনসহ পাইকারি পর্যায়ের রসিদ দেখে পেঁয়াজ কিনলে বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। শ্যামবাজারের আড়তদার বরকত ভাণ্ডারের সামশুল আলম বলেন, আমদানিকারক, ফড়িয়া, আড়ত, পাইকারি বাজার থেকে খুচরা পর্যায় পর্যন্ত এই পাঁচ ধাপে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ক্রমপর্যায়ে বাড়ে। ফলে প্রতি কেজি ১৯ টাকার পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। পেঁয়াজের বাজার শিগগিরই স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন শ্যামবাজার বণিক সমিতির সহসভাপতি ও আমদানিকারক প্রদেশ পোদ্দার। তিনি বলেন, আগামী কোরবানির ঈদ পর্যন্ত সময়ে পেঁয়াজের দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কারণ ভারতে এবার পেঁয়াজের দাম কম, ১৫ থেকে ১৬ রুপি। আমদানির পর বাংলাদেশ পর্যন্ত পৌঁছাতে খরচ পড়ে ৩০ রুপি (৪০ টাকা)। কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ভোক্তাসাধারণ যে পেঁয়াজ ২৫ থেকে ৩০ টাকায় পাওয়ার কথা, সেটি কিনতে হচ্ছে ৭০ টাকায় । কম দামে পেঁয়াজ আমদানি করে দ্বিগুণ-তিন গুণ দামে বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীর। বাজার নজরদারিতে দুর্বলতার কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন। এই শ্রেণিকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার। নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি গতকাল বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা। অনুমতির পর গত সাত দিনে ভারতীয় পেঁয়াজে খাতুনগঞ্জের আড়ত ভরে গেলেও দাম নতুন করে কমেনি। জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের আড়তদার মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘গতকাল ভারতীয় পেঁয়াজ আড়তে কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজ আসার পর দেশি পেঁয়াজের কদর চট্টগ্রামে কমে গেছে। এ কারণে দেশি পেঁয়াজের চাহিদাও কমে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘আড়তে পেঁয়াজের দর আমরা নির্ধারণ করি না। আমদানিকারক ও সরবরাহকারীরাই দর ঠিক করে দেন, সেই দরেই আমরা বিক্রি করি।’