• শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৬ অপরাহ্ন

ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন: এক বিভ্রান্ত অধ্যায়ের চির বিদায়

স্বাধীন ভোর ডেস্ক / ১৩২ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিতর্কিত অধ্যায়ের নাম। তিনি জাতির পিতার ঘনিষ্ঠ মানিক মিয়ার জেষ্ঠ্য পুত্র ছিলেন। মানিক মিয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিনির্মাণের একজন অন্যতম যোদ্ধা ছিলেন। তার হাত ধরে ইত্তেফাক আওয়ামী লীগের মুখপাত্রে পরিণত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সাহচর্যে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের সময়ে এক যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছিলেন। ইত্তেফাক একটি পত্রিকা ছিল না। পরিণত হয়েছিল একটি প্রতিষ্ঠান এবং আন্দোলনে। 
মানিক মিয়ার মৃত্যুর পর তার দুই পুত্র ইত্তেফাকের দায়িত্ব নেন। মানিক মিয়ার পুত্র হিসাবে বঙ্গবন্ধু তাদেরকে আপাত স্নেহে লালন করেছিলেন এবং ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে সংসদ সদস্য হিসেবেও জাতীয় সংসদে এনেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের সময় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন তার বিভ্রান্তির প্রথম প্রকাশ ঘটান। তিনি বাকশালে যোগ দানের অস্বীকৃতি জানান এবং সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।
ধারণা করা হয় যে, একান্ত মার্কিন অনুগত ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইশারাতেই সেই সময় বাকশালে যোগ দেননি এবং পৃথক অবস্থান নিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের নিকৃষ্টতম হত্যাকাণ্ডের পর ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন খুনি মোশতাকের সঙ্গে হাত মেলান। এটি ছিল তার বিভ্রান্তির আরেকটি নিকৃষ্টতম অধ্যায়। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এই খুনির সঙ্গে শুধু হাত-ই মেলাননি খুনির রাজনৈতিক দলে নিজের নামও লিখিয়েছিলেন। এরপর তার রাজনৈতিক জীবন কালিমালিপ্ত এবং বারবার তিনি বিভ্রান্তির চোরাগুলিতে নিজেকে আটকে রেখেছেন। কিন্তু ইত্তেফাকের কারণেই বৈষম্য ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে সবাই চিনত এবং ইত্তেফাকের কারণেই তিনি রাজনীতির মাঠে আলোচিত হতে পেরেছিলেন। সেই ইত্তেফাকও আর মানিক মিয়ার আদলে আদর্শে থাকেনি। বরং ইত্তেফাকেও তিনি নিয়ে যান ভিন্ন ধারায়। সেসময় ইত্তেফাক সিআইএর মুখপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। যদিও এক ঝাঁক মেধাবী সংবাদকর্মীর নিরলস প্রচেষ্টায় তখন ইত্তেফাক ছিল দেশের শীর্ষ দৈনিক। কিন্তু মানিক মিয়া দুই পুত্র ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জু দুইজনই ইত্তেফাকের সেই ঐতিহ্যের ধারা রক্ষা করতে পারেননি।
বিভিন্ন সময় আওয়ামী বিরোধী শক্তির প্রতি আনুগত্য দেখানো, তাদের সাথে হাত মিলিয়ে আওয়ামী লীগকে বিপদাপন্ন করাই ছিল ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের রাজনীতির প্রধান উপজীব্য। ২০০৭ সালের এক-এগারোর পর তিনি উপদেষ্টা হয়েছিলেন। এই উপদেষ্টা হওয়ার পরে তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতিকে গ্রেপ্তারে ভূমিকা রেখেছিলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি গ্রেপ্তার হওয়ার পর সেই বর্ষণমুখর রাতে যাদেরকে ফোন করেছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন একজন। কিন্তু সেই সময়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে নানা ঋণে আবদ্ধ মানিক মিয়ার পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু কন্যাকে কোনো সহায়তা দেয়নি। বরং ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ছিলেন সেই সমস্ত কুশীলবদের একজন যারা শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন। এক-এগারোর এক পর্যায়ে তিনি পদত্যাগ করেন এবং এক-এগারোর উগ্রবাদী ধারার অবসান ঘটে। এরপর দেশে নির্বাচন হয়।
দীর্ঘ সময় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন নীরবতা পালন করলেও এক পর্যায়ে আবার বিএনপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকম অপপ্রচারে লিপ্ত হন। এক সময় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন একটি টেলিভিশনের টকশোতে একজন নারী সাংবাদিকের প্রতি অশ্লীল এবং কুরুচিপূর্ণ উক্তি করে বিতর্কিত হন। এর জেরে তাকে জেলেও যেতে হয়। তবে রাজনীতিতে নানা উত্থান পতনের মধ্যে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন একজন স্পষ্টবাদী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার রাজনীতির বিভ্রান্তি তাকে কখনোই মর্যাদার আসন দেয়নি। তবে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থী উগ্র প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির একজন ধারক হিসেবে চিরকাল স্মরণীয় থাকবেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ