• শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

বাসে অগ্নিসংযোগকারীদের বোনাস দিতেন ছাত্রদল নেতা: সিটিটিসি প্রধান

স্বাধীন ভোর ডেস্ক / ১১১ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় সোমবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৩

সম্প্রতি হরতাল ও অবরোধকে কেন্দ্রে করে রাজধানীসহ সারা দেশে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। এসব বাসে আগুন দেওয়ার জন্য প্রত্যেক অগ্নিসংযোগকারী পান নির্দিষ্ট পরিমাণ পারিশ্রমিক। আর আগুন দেওয়ার পরপরই অগ্নিসংযোগকারীর মোবাইলে পাঠিয়ে দেওয়া হতো বোনাস তিন হাজার টাকা। দ্বিতীয় দফা অবরোধে এই বোনাসের পরিমাণ আরও বাড়ানো হয়েছে।

রাজধানীতে যাত্রীবেশে বাসে উঠে অগ্নিসংযোগকারীদের নির্দেশদাতার অভিযোগে আটক ঢাকা মহানগর ছাত্রদল নেতাকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট-এর (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।

অগ্নিসংযোগের অভিযোগে গ্রেপ্তাররা হলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আমির হোসেন রকি (২৫) ও তাঁর সহযোগী সাকিব ওরফে আরোহান (২১)। গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর বাবুবাজার ব্রিজ এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে বোতল ভর্তি পেট্রল উদ্ধার করা হয়।

সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, গত পয়লা নভেম্বর রাজধানীর মুগদাপাড়া আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মিডলাইন বাসে কয়েকজন রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত যাত্রীবেশে উঠে আগুন দিয়ে পালানোর সময় আল আমিন নামে একজনকে হাতেনাতে আটক করেন স্থানীয়রা।

গ্রেপ্তার আল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, কার নেতৃত্বে কীভাবে বাসে আগুন দেওয়া হয়। এই ঘটনায় কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) গোয়েন্দা দল আল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরবর্তীতে তিনি বেশ কিছু তথ্য দেন।

মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, তাঁর (আল আমিন) নেতা মিজানুর রহমান। এই মিজানের নেতৃত্বে আরও দুজন কমলাপুর টিটিপাড়া থেকে বাসে উঠে পেছনের সিটে গিয়ে বসেন। এরপর সঙ্গে থাকা পেট্রল ঢেলে বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। মিজানসহ ৩ জন পালাতে পারলেও স্থানীয়রা আল আমিনকে ধরে ফেলেন। পরবর্তীতে মিজানকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে মিজান সিটিটিসিকে বলেন, মহানগর ছাত্রদলের একজন নেতা আমির হোসেন রকির নেতৃত্বে মিজান রাজনীতি করেন। এই রকির নির্দেশনায় ও তত্ত্বাবধানে প্রথম দফা মিডলাইন বাসসহ বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এই নেতার কাছ থেকে সব ধরনের রসদ পেয়ে চারজন বাসে আগুন দেওয়া শুরু করেন। এর বাইরেও আরও বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দিয়েছেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রথম দিনের অবরোধে মিজান এসে আল আমিনের কাছে বোতলে পেট্রল ও টাকা দেন। এ সময় মিজান তাঁদের আশ্বস্ত করেন যে, দল ক্ষমতায় আসছে। কোনো সমস্যা হবে না তোমরা বাস পোড়াও।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, কমলাপুরের টিটিপাড়া থেকে খিলগাঁও সড়কে চলাচল করা বাসে আগুন দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁদের। প্রতিটি বাসে আগুন দেওয়ার জন্য তিন হাজার টাকা বোনাস বিকাশ করে দেয়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফা অবরোধে বাসে আগুন দেওয়ার জন্য ডাবল বোনাস ঘোষণা করা হয়।

পুলিশের এই কর্মকর্তার দাবি দ্বিতীয় দফা অবরোধে রোববার রাজধানীতে ১০টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। সেদিনও রকির নির্দেশনায় দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রকির নির্দেশে যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জে আগুন দেওয়ার সময়ে হাতেনাতে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের তৎপরতায় আগুন ঠেকিয়ে দেওয়া হয়। এটাতে ব্যর্থ হওয়া রকি তাঁর সহযোগী সাকিবকে নিয়ে কেরানীগঞ্জ এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিএনপির এক নেতার কাছে যাচ্ছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর পিছু নিয়ে বাবুবাজার ব্রিজ থেকে পেট্রলসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিটিটিসি জানায়, তাঁর কাছ থেকে বেশ তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি কী কী কাজ করেছেন এই দুই দফা অবরোধে। কার কার নির্দেশনা ছিল, কারা টাকা দিয়েছে সব তথ্য পাওয়া গেছে।

আগুন দেওয়ার পরের বেশ কিছু ভিডিও ও ছবি অগ্নিসংযোগকারীদের মোবাইল ফোনে পাওয়া গেছে এমনটা উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান বলেন, ‘প্রথম দিনের অবরোধে কী পরিমাণ জ্বালাও পোড়াও করেছে। এই ফুটেজ আমরা তাঁর মোবাইলে পেয়েছি। অবরোধ কর্মসূচিতে বাসে আগুন দিতে কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, কারা কারা সহযোগিতা করেছে আমরা সবার নাম পেয়েছি। আপনারা জানেন আরও একটি ভয়ংকর তথ্য দিয়েছে, প্রথম অবরোধে একটি বাসে আগুন দিলে যা পুরস্কার দিত, দ্বিতীয় অবরোধে সেটি ডাবল করার ঘোষণা দিয়েছে। আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরস্কার পাঠানো হত। আমরা রকির কাছ থেকে নির্দেশ দাতাদের তথ্য পেয়েছি। রকির নেতৃত্বে আরও কয়েকটি দল সক্রিয় রয়েছে।’

পুরস্কারের অর্থদাতা কারা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সবার তথ্য পেয়েছি। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে কারও নাম প্রকাশ করছি না। তবে একে একে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে এবং গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হবে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ