বর্তমানে প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ উল্লেখ করে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে। ফলে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পুরো সুফল পেতে আরও প্রায় একবছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘উড়াল সড়ক প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে পুরোটা চালু করা সম্ভব হবে। এটি যখন মতিঝিল পর্যন্ত উদ্বোধন হয়ে যাবে তখন সুফল অনেক বেড়ে যাবে। ঢাকা আরও আধুনিক শহরে রূপ নেবে, যান চলাচল আরও সহজ হবে।’
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত চালু হওয়ায় কাওলা থেকে যারা ফার্মগেট আসবেন কিংবা ফার্মগেট থেকে কাওলা যাবেন কাজের জন্য তারাই পুরো সুবিধাটা পেতে যাচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে মতিঝিল, পুরান ঢাকা কিংবা যাত্রাবাড়ীতে যাতায়াতকারীরা বলছেন, উড়াল সড়কের সুফল পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তারা।’
সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের। এর প্রথমাংশে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার উদ্বোধন হচ্ছে শনিবার। উড়াল সড়কটি মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত যাবে। এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র্যাম্প রয়েছে। ফলে র্যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা সায়মা আঞ্জুম পড়াশোনা করেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি বলেন, ‘আমার প্রতিদিন পুরান ঢাকা থেকে ক্লাসে যেতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লাগে। ৮টার ক্লাস ধরতে হলে আমাকে বাসা থেকে ভোর ৬টায় বের হতে হয়। দেরি হলে ক্লাস মিস, সঙ্গে অ্যাটেনডেন্স মার্কসও কমে। তাই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পুরোপুরি চালু হলে আমি এর পুরো সুবিধাটাই পাবো। ফার্মগেট পর্যন্ততো চালু হচ্ছে, কবে যে যাত্রাবাড়ী মতিঝিল পর্যন্ত চালু হবে সে অপেক্ষাতেই আছি। এই পর্যন্ত হয়ে গেলে আমার আর জ্যাম নিয়ে টেনশন থাকবে না। এক টানেই চলে যেতে পারবো।’
জুরাইনে বসবাসকারী দিদারুল কবিরকে প্রতিদিন বনানীতে যেতে হয় তার কর্মক্ষেত্রে। তিনি বলেন, ‘আমার প্রতিদিন যে পরিমাণ সময় আর এনার্জি নষ্ট হয় তা কমতে পারে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পুরোপুরি চালু হলে। শুনেছি, যাত্রাবাড়ী থেকে এয়ারপোর্ট যেতে ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট সময় লাগবে- এটা যদি সত্যিই হয়ে থাকে তাহলে আমরা যানজটমুক্ত একটি নগরী পেতে যাচ্ছি সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।’
কাওলা থেকে মতিঝিল গিয়ে অফিস করেন সাদাত আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যেদিন পুরোপুরি চালু হবে সেদিন আমি পুরোপুরি বেনিফিটেড হবো। রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব হবে আধা ঘণ্টায়, এটা সত্যিই আমাদের জন্য এক বিশাল পাওয়া হবে। সরকার সত্যিই খুব ভালো ভালো উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু যারা এর ইমপ্লিমেন্টেশনে (বাস্তবায়ন) আছে তাদের স্বদিচ্ছার কারণে অনেক কিছু করা যাচ্ছে না। তাই ইমপ্লিমেন্টেশনটা আমাদের খুব জরুরি দরকার এবং খুব অ্যাকটিভলি করা দরকার।’
সাজ্জাদ হোসেন থাকেন কাওলায়। চাকরির সুবাদে তাকে প্রতিদিনই যেতে হয় মতিঝিল। তিনি বলেন, ‘অফিস আওয়ারে দুই ঘণ্টার নিচে মতিঝিল পৌঁছানো কোনোভাবেই সম্ভব না। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আমাদের এই সমস্যার সমাধান হয়ে এসেছে। আমার মনে হয় অবশ্যই এই ধরনের কাজ আমাদের জন্য অনেক দরকার। এই ধরনের প্রোজেক্টগুলো আমাদের নগরীর চেহারা পাল্টে দেবে।’
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের সুফল ইতোমধ্যেই পাচ্ছে মানুষ। এর কমন সুফল হচ্ছে— যানজট কমবে, সড়কে আটকে থাকার ভোগান্তি কমবে, সময় বাঁচবে, যাতায়াতে স্বস্তি আসবে। একইভাবে এসব সুফল মিলবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে। তবে উভয় প্রকল্প পুরোপুরি চালু হলে সুফলটা আরও বেশি দৃশ্যমান হবে।