• শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন

কর্মবিরতিতে চিকিৎসকরা, ঢামেকে ডেঙ্গু চিকিৎসা নিয়ে শঙ্কা

স্বাধীন ভোর ডেস্ক / ৪৯ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩

ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে শনিবার (৮ জুলাই) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছেন পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। দীর্ঘদিনের ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে কেউ কর্ণপাত না করায় এই কর্মসূচি পালন করছেন তারা।

পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে রাজধানীর শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বেলা ১১টা থেকে এই কর্মবিরতি পালন করেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মতো অনেক সরকারি হাসপাতালে। তাই ডেঙ্গু চিকিৎসা নিয়ে শঙ্কায় আছে ঢামেক কর্তৃপক্ষ। কারণ ঢামেকের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত প্রায় অর্ধেক চিকিৎসকই এই সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।

চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারা দেশে সাড়ে সাত হাজার পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট চিকিৎসক আছেন যারা এমন ভাতা পান। ভারত, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ভাতা অনেক কম। অর্থের চিন্তার কারণে রোগীদের সময় দিতে পারেন না চিকিৎসকরা। বর্তমানে ভাতা ২০ হাজার কিন্তু খরচ এর থেকে কয়েকগুণ বেশি। এই ভাতা আবার প্রতিমাসে না দিয়ে একবারে ছয় মাস পর পর দেওয়া হয়।

চিকিৎসকরা জানান, পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি নিতে সময় লাগে পাঁচ বছর। এখানে বেসরকারি প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের ভাতা দেওয়া হয় মাত্র ২০ হাজার টাকা। এর বাইরে বোনাসসহ অন্য সুবিধা নেই। নেই ইনক্রিমেন্ট।

চিকিৎসকরা আরও জানান, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ৬৭ হাজার ৬৮৩ টাকা, পাকিস্তানে ৩৮ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয়। আর বাংলাদেশে ভাতা ২০ হাজার টাকা, যা বর্তমান বাজার মূল্যের তুলনায় অমানবিক।

পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুনন্নবী বলেন, ‘বর্তমান বাজার মূল্যের তুলনায় ভাতার পরিমাণ খুবই কম। আমাদের পরিবার আছে, সব কিছু মিলিয়ে আমরা ভালো নেই। আমরা ভালো না থাকলে রোগীদের ভালো চিকিৎসা কীভাবে দেবো। আমরা এ নিয়ে একাধিকবার শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছি, কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি, ঊর্ধ্বতন মহলকে জানিয়েছি। কিন্তু সবাই নৈতিক সমর্থন দেয় আমাদের দাবির সঙ্গে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি। তাই আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছি।’

তিনি আরও বলেন, আমাদের এই আন্দোলন দুই বছর আগে শুরু হয়, যদিও পুরোটা সময় সক্রিয়ভাবে না হলেও গত ছয়মাস ধরে আমরা সক্রিয়ভাবে জানিয়ে আসছি। যখন দেখছি কেউ আমলে নিচ্ছে না, আমাদের কাছে মনে হয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া এখন আর সম্ভব না। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কর্মবিরতি পালন করছি।

চিকিৎসকদের ভাতা বৃদ্ধি নিয়ে জানতে চাইলে শনিবার সকালে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে কথাবার্তা চলছে। কর্মবিরতিতে গেলে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হবে। এটা তাদের ভাবতে হবে। আমার কাছে মনে হয় তারা এই বিষয়ে সচেতন। রোগীর কথা ভেবে হয়তো তারা সিদ্ধান্ত পাল্টাবেন বলে আশা করি।’

তিনি আরও জানান, চিকিৎসকদের দাবির বিষয়ে লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আশা করি তাদের দাবি পূরণ হবে।

চিকিৎসকদের দাবি, পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের ভাতা ২০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকায় উত্তীর্ণ করতে হবে।

পোস্ট গ্রাজুয়েট চিকিৎসকরা দুই বছর থেকে দীর্ঘ পাঁচ বছর উচ্চশিক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন এবং এই সময়টা তারা হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা দিতে বাধ্য। একই সঙ্গে নিয়ম অনুযায়ী তারা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবেন না। এ জন্য তারা সরকারের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা ভাতা পেয়ে থাকেন, যা একটা বড় শহরে থেকে সংসার পরিচালনার জন্য যৎসামান্য। বাড়ি ভাড়া ও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে উচ্চ বাজার মূল্যের এই কঠিন সময়ে সংসার পরিচালনা করা কষ্টের এবং অমানবিক বলে জানান তারা।

চিকিৎসকরা জানান, সকল পোস্ট গ্রাজুয়েটদের ভাতা ২০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকায় উত্তীর্ণ করলে বাড়তি খরচ হবে মাত্র ৯ কোটি টাকা। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাজেটের অব্যবহৃত অর্থের পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা, যেটা সরকার ফেরত নিয়ে যায়।

এদিকে প্রতিদিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। ঢামেক হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৪০ জনের বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হন। ৬ জুলাই পর্যন্ত ১৮১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন এই হাসপাতালে। আর রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকেন এই চিকিৎসকরা। তাই চিকিৎসকরা কর্মবিরতি যাওয়ায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।

শনিবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ‘চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে গেলে আমাদের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে। আমাদের জনবল অর্ধেক হয়ে যাবে হাসপাতালে। এখন যেভাবে চিকিৎসা দিচ্ছি তখন সেভাবে সেবা দেওয়া যাবে না।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ