• রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন

শেরপুরে কোরবানির ৩০হাজার পশু অবিক্রিত; খামারিদের মাথায় হাত

স্বাধীন ভোর ডেস্ক / ১১৫ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩

শেরপুর প্রতিনিধি

শেরপুরে এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা ৮৫ হাজার ৫৫০ টি পশুর মধ্যে ৩০ হাজার পশু অবিক্রিত রয়ে গেছে। কোরবানির ঈদে কাঙ্খিত পর্যায়ে পশু বিক্রি না হওয়ায় বেকায়দায় পড়েছে জেলার খামারিরা। আবার যতটুকু বিক্রি হয়েছে তার কাঙ্খিত মূল্য না পাওয়ায় অনেক খামারীর এখন মাথায় হাত। তবে জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের প্রত্যাশা, অবিক্রিত পশু ঈদের পরে বিভিন্ন অকেশনে বিক্রি হবে। শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুরে জিহান ডেইরি ফার্মের মালিক রেহানা ইদ্রিস ব্যাংক ঋণ নিয়ে দেড়শটি বড় ষাড় গরু প্রস্তুত করেছিলেন কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য। প্রত্যাশা ছিলো ষাড় বিক্রি করে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করে লাভবান হবেন এ খামারি। ভালো দাম পাওয়ার আশায় ঢাকার বাটারার সাঈদ নগর গরুর হাট ও মিরপুর গরুর হাটে দেড়শটি ষাড় গরু নিয়ে যায়। দীর্ঘ ১০দিন অপেক্ষার পরও পানির দামে ২৭টি গরু বিক্রি করা হয়। বাকী ১শ ২৩টি গরু ফেরত আনতে হয়। এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে এ খামারি। এভাবেই জেলার অধিকাংশ খামারি ও পাইকাররা গরু বিক্রি না করেই ফেরত এনেছে। জিহান ডেইরি ফার্মের ম্যানেজার মুকুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের মালিক ব্যাপক লোকসানে পরেছে। এবার গরুর দাম ছিলো কম। আর আশানুরূপ বিক্রিও করতে পারি নাই। আমরা বিক্রির আশায় শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু ক্র‍েতারা গরুর দামই করে না। কমদামে ২৭ টি গরু বিক্রি করে আসা যাওয়ার খরচটা তুলে এনেছি। যদি খামার মালিকরা এভাবে লোকসান খায় তাহলে আমাদের মত কর্মচারীরা কিভাবে কাজ করবে’। একদিকে জেলায় চাহিদার চেয়ে কোরবানি হয়েছে কম। ঢাকাসহ অন্য স্থানেও পশু তেমন একটা বিক্রি হয়নি। তাই চাহিদার চেয়ে বেশী গরু জেলার কোরবানির হাটে আমদানী হওয়ায় অনেক কম দামে পশু বিক্রি করতে হয়েছে। আবার অনেকেই হতাশ হয়ে বাড়ী ফিরে নিয়ে গেছে তাদের কোরবানির পশু। এদিকে বেশী দামে কাঁচা ঘাস, খড়, ভূসি, ভূট্টার গুড়া ও খৈলসহ কিছু ভিটামিন খাইয়ে পশু মোটাতাজা করায় পশু উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে বেশী। দাম পেয়েছে কম। এতে হতাশ ছোট-বড় খামারি ও কৃষকরা। চরশেরপুরের গরুর পাইকার হামিদ মিয়া জানান, ‘আমি ৫ টা গরু নিয়া গেছিলাম একটা গরু বিক্রি করতে পারছি। দাম কম বলে তারজন্য বাকি ৪ টা ফেরত আনছি’। কামারচরের গরু খামারি মোঃ হারুন বলেন, ‘আমি দুইডা গরু পালছিলাম আশা করে। ঢাকা নিয়া তো একটাও বেচবার পাই নাই। আরও ঢাকা আসা যাওয়ার খরচ হইলো কতগুলা টাকা। গরুর কেমনে বেচমু দাম কম বলে। খাবার দাবারের যে দাম এখন’। বাজিতখিলার মাইনুল হোসেন বলেন, ‘শেরপুরের নওহাটা গরুর হাটে আমার একটা বড় গরু আছে তুলছিলাম। কিন্তু দাম কম হইছিল তাই বেচি নাই। ছোট ও মাঝারি গরুর দামই ভালা গেছে। এহন তো এইডারে আরও একবছর পালতে হবো। খরচও আছে এর পিছনে’। খোয়ারপাড়ের হযরত বলেন, ‘এবার বড় গরুর দাম একবারে কম গেছে। আমার গরুটা তিন লাখ টাকা হইতো। কিন্তু শেষের দিন কমদামেই দুই লাখ টাকাতে দিয়া দিছি। এতে আমি অনেক লোকসানে পরে গেছি। খাবারের যে দাম। কিভাবে খামারিরা টিকবে’। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, এবার ঈদে জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ছিলো ৫৬হাজার ৪শ ৪৯টি। আর জবাই হয়েছে মাত্র সাড়ে ৫৪ হাজার পশু। জেলায় এবার মোট ২৫টি কোরবানীর হাট ৫টি অনলাইন প্লাটফর্মে কোরবানির পশু বিক্রির নানাভাবে প্রচারনা চালানো হয়েছিলো। শেরপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এবার জেলায় ৩০ হাজারের উপরে কোরবানির পশু অবিক্রিত রয়েছে। আমরা আশা করি অবিক্রিত পশুগুলো রয়েছে তা আমাদের সারাবছর নানা দিবস ও অনুষ্ঠানে বিক্রি হয়ে যাবে। আমাদের সারাবছরই মাংসের একটা চাহিদা আছে। খামারি ভাইদের আমি চিন্তা না করতে বলবো। খাদ্যের দাম বেশি থাকায় এবার খামারিদের লাভটা কম হয়েছে। আর তাদের বিক্রির পরিমানটাও কম হয়েছে। আমরাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকবে খামারিদের জন্য।আমরা আশা করবো পরবর্তীতে খামারিরা এ ক্ষতি পুশিয়ে ওঠবেন’।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ