• শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন

প্রধানমন্ত্রীর ইতালি সফরে পাঁচ চুক্তির সম্ভাবনা

স্বাধীন ভোর ডেস্ক / ৭৪ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ইতালি সফরে পাঁচটি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরমধ্যে অভিবাসন, জ্বালানি, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা এবং আইসিটি ও সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ক চুক্তি সই নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। এছাড়া ২৪ থেকে ২৬ জুলাই তিনি রোমে অনুষ্ঠেয় ফুড সিস্টেম সামিটে মূল অনুষ্ঠানে বক্তব্যও দেবেন।

ইউরোপের বড় দেশ ইতালি সফরকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এর ফলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ইতালির সঙ্গে প্রতিরক্ষা এবং আইসিটি ও সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ক চুক্তি করা হলে ভবিষ্যতে সম্পর্ক কৌশলগত স্তরে নিতে সুবিধা হবে। এছাড়া ইতালির প্রযুক্তি বাংলাদেশের ছোট ও মাঝারি শিল্পের উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘ইতালির সঙ্গে সহযোগিতার অনেক সুযোগ রয়েছে। উৎপাদন খাতে ওইদেশে মাঝারি মানের বিভিন্ন প্রযুক্তি রয়েছে এবং সেগুলো যদি বাংলাদেশ সংগ্রহ করতে পারে তবে উৎপাদন খাতে বড় ধরনের সুযোগ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

একই ধরনের মনোভাব পোষণ করে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুনশি ফায়েজ আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের ছোট ও মাঝারি শিল্প বিকশিত হচ্ছে। অন্যদিকে যে ইতালির নিম্ন প্রযুক্তি (লো টেক) রয়েছে সেগুলো বাংলাদেশে আনা হলে এখানে বড় ধরনের বাজার তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

উল্লেখ্য, জাতিসংঘ খাদ্য ব্যবস্থা শীর্ষক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য ইতালি যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালে ইতালি সফর করেন শেখ হাসিনা।

যেসব চুক্তি হতে পারে

মাইগ্রেশন অ্যান্ড মবিলিটি চুক্তি: ইতালির বৈশ্বিক ফ্লসি প্রোগ্রামের আওতায় অন্যান্য দেশের পাশাপাশি গত দুই বছর ধরে সাত থেকে আট হাজার সিজনাল বাংলাদেশি কর্মী ইতালি যাচ্ছে। ফ্লসি প্রোগ্রামটি সারা বিশ্বের জন্য এবং বাংলাদেশের আগ্রহ ইতালির সঙ্গে বাংলাদেশি পাঠানোর জন্য পৃথক একটি চুক্তি করা— যার মাধ্যমে কন্সট্রাকশন বা শিপবিল্ডিং বা অন্য খাতেও যেখানে ইতালির আগ্রহ রয়েছে সেখানে কর্মী পাঠানো যায়। বর্তমানে ওইসব খাতে ইতালি পূর্ব ইউরোপ থেকে কর্মী সংগ্রহ করে থাকে।

প্রতিরক্ষা চুক্তি: সম্প্রতি বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছে যার অধীনে প্রশিক্ষণ, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী, সক্ষমতা বৃদ্ধি, ক্রয়সহ অন্যান্য বিষয় রয়েছে। ইতালির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তি করার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। যদি ইতালির সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি হয় তবে ইউরোপের দ্বিতীয় কোনও দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ এ ধরনের চুক্তি করবে। এর আগে ২০২১ সালে ফ্রান্সের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে।

জ্বালানি চুক্তি: এর অধীনে ইতালি থেকে এলএনজি আমদানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি সহযোগিতা, জ্বালানি শোধন প্রযুক্তিসহ অন্যান্য বিষয় থাকবে।

সহযোগিতার ক্ষেত্র

ইতালির সঙ্গে অভিবাসন ও নিম্ন মানের প্রযুক্তি হস্তান্তর খাতে সহযোগিতার বড় সম্ভাবনা আছে।

এ বিষয়ে সাবেক সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘অনেক বাংলাদেশি অবৈধপথে ইতালি পাড়ি জমায় যা রোম ভালো চোখে দেখে না। দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সম্পর্কের জন্য এটি বন্ধ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।’

তিনি বলেন যে বৈধ পথে ইতালিতে লোক পাঠানো ব্যবস্থা করা সম্ভব হলে অবৈধপথে যাওয়া হ্রাস পাবে বলে মনে হয় এবং এটি সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়তা করবে।

নিম্ন প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে তিনি বলেন, আফ্রিকার অনেক দেশ বিশেষ করে মিশরে নিম্ন প্রযুক্তি সরবরাহ করে থাকে ইতালি এবং মিশর থেকে ইতালির প্রযুক্তিতে উৎপাদিত পণ্য পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। বাংলাদেশে যদি ইতালির প্রযুক্তির পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়, তবে অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি সেগুলো নেপাল, ভুটান এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে পাঠানো সম্ভব হবে।

কৌশলগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, চীন ও জাপানের কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে এবং ওইদেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে হবে। এখন আমরা হয়তো ইউরোপের কোনও দেশের সঙ্গেও কৌশলগত সম্পর্ক গড়ার বিষয়ে আগ্রহী হবো।’

পশ্চিম ইউরোপের সবচেয়ে বড় দুটি দেশ হচ্ছে জার্মানি ও ফ্রান্স। কিন্তু ইতালির সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক হলে ভালো হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটি দেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপনের আগে বিবেচনা করতে হবে সেটি অন্য দেশের সঙ্গে স্থাপিত কৌশলগত সম্পর্কের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা অথবা ভুল বার্তা দেওয়া হচ্ছে কিনা।’

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ