• বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯ অপরাহ্ন

মানুষ ও মানবতা

স্বাধীন ভোর ডেস্ক / ১৩৮ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় রবিবার, ২ জুলাই, ২০২৩

এইচ এম গোলাম কিবরিয়া রাকিব

সমস্ত প্রশংসা সেই মহান সত্ত্বার যিনি সৃষ্টিজগতের স্রষ্টা। আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তার ইবাদত করার জন্য। তবে এই ইবাদত ক্ষেত্র অর্থাৎ পরকালীন ফসল ফলানোর এ জগতে মানুষ বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। এবং এই সমস্যার মোকাবেলা করতে সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে যারা অন্যের সাহায্যের জন্য আজও হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। কেননা তারা উপলব্ধি করতে পারে আশাহীন ভবিষ্যতের মতো অন্ধকারে আচ্ছন্ন মানুষের সামাজিক দূরবস্থার কথা। মানুষ বেঁচে থাকে তার মৌলিক অধিকারের বিকাশের মাধ্যমে। কিন্তু কিছু অসহায়, কিছু অনাহার, কিছু বস্ত্রহীন এবং কিছু আশাহনি মানুষ বেঁচেও যেন মরার মতো। তাদের কাছে জীবন মৃত্যু দুটোই সমান তাদের বেঁচে থাকার জন্য দরকার বৃদ্ধা মানুষের ছড়ির মতো বিন্দু ভিত্তি। আর সে ভিত্তিটি হলো মানুষের সহানুভূতি অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী এবং ধণার্ঢ্য ব্যক্তিবর্গ আছে, যাদের সন্তানরা রুপোর চামুচ মুখে নিয়ের পৃথিবীতে এসেছে। আপনারা হয়তো দেখে থাকবেন, তাদের সন্তানরা কিছু চাওয়ার আগে পেয়ে যাচ্ছে। তাদের বাবা মা তাদের পিছু পিছু সারাদিন ছায়ার মতো দৌড়াতে থাকে শুধু এটা জানার জন্য যে, তার সন্তাদের কী প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্যি যে আজও আমাদের আশে পাশে, অনেক মানুষ অবহেলায়, নিরাস্ত্রয়ে ও অভাবে ভোগছে। বিশ্ব মানবতার কথা বলে যেখানে সেখানেও সোমালিয়া, বুসনিয়ার মতো দেশে অনেক মানুষ অভাবে, অনাহারে ভুগছে। ক্ষুধার জ¦ালা বড্ড খারাপ। এই ক্ষুধার টানে মানুষ আজ খারপ পথে পা বাড়াচ্ছে। তার কারণ কী জানেন? আমিই বলছি, “দুর্বল সামাজিক অর্থনৈতিক অবকাঠামোঃ, তাদের পিছু পিছু দৌড়ে খাওয়ানোর মতো কেউ নেই; নেই তাদেরকে সমাজের অন্ধকার গুহা হতে টেনে বের করে সভ্যতার যুগে আনার মতো দুঃসাহসী চেতনাধারী ব্যক্তিত্ব। আমি সেই সব মানুষদেরকে বলব, আপনারা তাকাননা তাদের দিকে একটু করুণার দৃষ্টিতে, বুকে টেনে নিন না নিজের সন্তানের মতো করে, তবে দেখতে পাবেন পৃথিবীতে শান্তির শ্বেত কপোত প্রবাহিত হচ্ছে তার জন্যই কবি বলেছেন, “প্রীতি ও প্রেমের পূণ্য বাধনে, যবে মিলি পরস্পরে
স¦র্গ আসিয়া দাড়ায় কখন আমাদেরই কুড়ে ঘরে”॥ যখন শিক্ষা ব্যবস্থার কথা ধরি, তখন দেখতে পাই আমাদের এ নির্মম সমাজ শিশুদেরকে অবহেলায় রাখছে। অনেক ছেলে মেয়ে আজ বিদ্যালয়ে যাবার বদলে চায়ের দোকানে কাজ করছে। আর যারা স্কুল পেরিয়ে নিজের স¦প্নের রঙ্গিল পৃথিবীতে উঠে নিজের পরিবারের দুঃখ লাঘব করতে চায়, তাদের একমাত্র প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে কিছু উচ্চ পদস্থ কর্মচারী ও কর্মকর্তা। যাদের মেধা আছে, তারা পিছিয়ে থাকতে হচ্ছে অর্থের কারনে। কিন্তু মেধাশূন্য হওয়া স¦ত্ত্বেও যারা পারিবারিক ও অর্থের দাপটে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও পরিচালনায় হাত বাড়াচ্ছে, তাদের দ্বারা উন্নতির চেয়ে অবনতিটা সবচেয়ে বেশি। তাদের পরিকল্পনাটা বামন হয়ে চাঁদে হাত দেওয়ার প্রত্যাশার মতো। কিন্তু যদি আমরা সেই মেধাবী গরীব শিক্ষার্থীদেরকে খোঁজ করে কাজে লাগাই, তাহলে একদিকে যেমন দেশের মান উন্নয়নও সম্ভব, তেমনি অন্যদিকে সম্বলহীন মানুষদেরকে কাজে লাগিয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়নও সম্ভব। তাইতো বলা হয়,
“একটি আলোর কনা দিয়ে,
লক্ষ প্রদীপ জ¦লে,
একটি শিশু শিক্ষা পেলে
বিশ্ব পাতা মেলে॥”
যখন বস্ত্রের কথা মনে হয়, তখনও ভাবতে অবাক লাগে কীভাবে আমরা বস্ত্রহীন মানুষদেরকে এড়িয়ে চলি। এদেশের প্রায় সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষই মুসলমা। তবুও আমাদের বহুল সংখ্যক মুসলিম মানুষ নিয়ে গঠিত সমাজ ব্যবস্থা কেন জানি ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেক ধর্মই একে অপরের প্রতি সহনশীল হতে বলেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,
“হে মানবমন্ডলী! আমি তোমাদের একজন নারী ও একজন পুরুষ হতে সৃষ্টি করেছি। আর তোমাদের বিভিন্ন সম্প্রদায় ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হতে পার”॥ কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা কখনো মানেনা তাদের ভাতৃত্ব বন্ধন, মনে না সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি, তারা শুধু নিজের কাজের মধ্যেই ব্যস্ত থাকে। কিন্তু “ডব যধাব ফঁঃরবং ঃড় ড়ঁৎ ংঃধঃব, ংড়পরবঃু ধহফ ঘধঃরড়হ”. ইসলাম ভাতৃত্ব বন্ধনকে এমন একটি বন্ধন বলেছে, যার দ্বারা বোঝা যায়, কোনো মুসলমান বিপদে পতিত হলে অন্য মুসলীম ভাই তার সমব্যথী হয়। তার সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। আমরা যদি সেই কথাটি স্মরণ রেখে চলি, তাহলে পৃথিবীতে শান্তির অঝড় ঝরণাধারার জলরাশি পতিত হবে। আপনারা আমরা এ কথাটিকে একটি অনুরোধ অথবা একটি মুসলিম ভাইয়ের কর্তব্য মনে করতে পারেন। সৃষ্টিকর্তা আমাদের এত জ্ঞান দেওয়া স্বত্ত্বেও আমরা সেই জ্ঞানকে ন্যায়পরায়নতা ও সৎকর্মে প্রতিফলিত করি না। প্রতিফলিত করি সার্বিক অপরাধ ও জুলুমের ক্ষেত্রে। যদি আমরা একে অপরের প্রতি সাহায্যের সহযোগিতার মাধ্যমে একটা রাষ্ট্র গঠন করি, তাহলে পৃথিবীর মানদন্ডে আমাদের দেশটা আদর্শস¦রূপ হয়ে দাড়াবে। মহানবী (স:) বলেছেন, “সমগ্য সৃষ্টি আল্লাহর পরিজন। সুতরাং আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় ঐ ব্যক্তিই যে তার পরিজনের প্রতি অনুগ্রহ করে॥” (বায়হাকি)
আর অবশ্যই “এড়ফ রং শরহফ ঃড় যরস, যিড় রং শরহফ ঃড় ড়ঃযবৎং”.
কিন্তু বর্তমানে, অপরাধ, জুলুম, দুর্ণীতি, অত্যাচার, খারাপ প্ররোচণা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে ফেলেছে। কেউ যদি কাউকে কুপ্ররোচণার মধ্যে ফেলে এবং তাদের কুপ্ররোচণায় যদি কারোও ক্ষতি হয়, তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, একদিন সৃষ্টিকর্তার সামনে আমাদের এ কৃতকর্মের জবাবদিহিতা করতে হবে। আর যখন নিজেদের ভুল বুঝতে পারব তখন আমরা অনুশোচনায় দগ্ধ হব। যেভাবে মানুষ দগ্ধিত হবে নরকের অনলে। সে সময় আমাদের এই অনুশোচনার কোনো মূল্য থাকবে না। একটি মানুষ যখন পিচ্ছিল খেয়ে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পায়, তখন সে বুঝতে পারে মাটিটি ছিল পিচ্ছিল। কিন্তু সে সময় তার কোনো স¦ার্থকতা থাকে না। শুধু এটাই তার স¦ার্থকতা যে ঐ মাটিটি ছিল পিচ্ছিল এবং তার উপর দিয়ের হাটাটার ছিল বিপদজনক। কিন্তু যখন এ স¦ার্থকতাটাও হারিয়ে যায় তখন সে দিশেহারায় পরিণত হয়। তেমনি মানুষ যখন একটি অপরাধ করে এবং সে যখন তার অপরাধের ভুল বুঝতে পারে তখন সে অনুশোচনায় পড়ে বটে। কিন্তু যখন সে ঐ অনুশোচনার কথাও ভুলে যায় তখন তার অবস্থা হয় উন্মাদের মতো এবং এরাই চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, সন্ত্রাসি নামক অপরাধে জড়িয়ে পড়ে এবং বেড়ে ওঠে সমাজের বোঝা হয়ে। তাই আসুন আমরা সবাই ভাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরোপকারে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে একসাথে একই সুরে বলি, আমরা সবাই মানুষ আমরাই পারি পৃথিবীকে শান্তিতে ভরিয়ে দিতে মুছে দিতে পারি, দুঃখ নামক অভিশাপের কাঠিটিকে॥
ইবপধঁংব, ড়িৎফং যধাব ধ ষড়ঃ ড়ভ ঢ়ড়বিৎ. শব্দ একজনকে সাহায্য অথবা ক্ষতি করতে পারে। তাই মাঝে মাঝে একটি মহৎ কথা বা শব্দ প্রায়ই একটি ব্যয়বহুল উপহারের চেয়ে দামি হয়। বিশ্ব মানবতা আজ হুমড়ি খেয়ে মুখ থুবরে পড়েছে। যদিও বিশ্ব মানবতা আজ অপরাধ এর প্রতি সোচ্চার। যদি কোনো ব্যক্তি মুখ থুবরে পড়ে এবং সে পুণরায় উঠে দাড়াতে চায়, মোকাবেলা করতে চায় পরিস্থিতি, তখন আমাদের বিশ্ব মানবতা কোথায় যায়? কোথায় যায় সেই সোচ্চার মনোভাব? বরং তখন কিছু মানুষ তাদের মোবাবেলার মনোভাব দুমড়ে মুচড়ে হতাশায় ভরে দেয়। আজ আমরা স¦াধীন বাঙালি জাতি কিন্তু পরাধীনতায় ভুগছি আজও। স¦াধীনতার জন্য ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মদান ও ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম যথেষ্ট নয় কী? তবে হ্যাঁ একটি কথা আছে, “নিজ ভালো তো জগৎ ভালো”॥ আগে নিজের মধ্যে মানবসত্তার বিকাশ ঘটানো অপরিহার্য। তার পর অন্যকে তাগিদ দেওয়া, আসুন আমরা সবাই নতুন রাষ্ট্র, সমাজ, পৃথিবী গড়ার জন্য হাত বাড়াই। গড়ে তুলি এক নতুন জগৎ। আমি তাইতো বলি
এক মুঠো স¦প্ন কিনতে চাই যে স¦প্নের পৃথিবীতে থাকবেনা কারও হাহাকার,
যে পৃথিবীর কোথাও থাকবেনা দুঃখ নামের কথাটি। যে স¦প্নের পৃথিবীতে পাওয়া যাবে না,
কোনো মায়ের সন্তান হারানোর হাহাকার পাওয়া যাবে না কোনো বোনের
ভাই হারানো বেদনাগুলি। আমি সেই স¦প্নগুলো কিনে বিলিয়ে দিয়ে নিজেকে নিঃস¦ করতে চাই
হাসি ফুটাতে চাই সেই সন্তান হারানো মায়ের মুখে জোছনা এনে দিতে চাই আমাবস্যা রাত্রিতে॥
যদিও পৃথিবীর সব মায়ের মুখে হাসি ফুটানো সব বোনের দুঃখ মুছানো এবং সব অমাবস্যার রাত্রিতে জোছনা এনে দেওয়া অসম্ভব। কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করা আমাদের দায়িত্ব, শান্তি প্রতিষ্ঠা করা আমাদের কর্তব্য, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিওয়া আমাদের উৎকৃষ্ট পরিচায়ক।
পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করা খুব সহজ নয়। তাই বলে কি আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকব?
ওভ ঃযব ড়িৎশ ভবষষং যধৎফ, ঃৎু ধহফ ধমধরহ ঃৎু. সুখ কথাটি খুবই প্রত্যাশিত একটি বস্তু। যেটি হউক কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে, হউক কোনো সমাজের ক্ষেত্রে, হউক কোনো দেশের ক্ষেত্রে। তবে ভালো কাজ অবশ্যই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে পারে
অ মড়ড়ফ ড়িৎশ সধু ষবধফ ঃযব যিড়ষব ড়িৎষফ ঢ়বধপব ধহফ যধঢ়ঢ়রহবংং.
দুঃখ মানুষের জীবনে হাতছানি দেয় শুধুমাত্র সুখের গুরুত্বটি বুঝার জন্য। দুঃখ পৌছে দেয় জীবনের সহ্য সীমার দ্বারপ্রান্তে আর বুঝতে দেয় তার চারপাশের পরিবেশকে। কিন্তু আমাদের এ জীবন সংগ্রাম শুধু আমাদের নয় সকলের। গাড়ি ভাড়া ২ টাকা বাড়লে মানুষের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়, কিন্তু কোনো অসহায় মানুষ হাত পাতলে তাকে ১০০০ টাকা দিয়ে দেয়, এই মানুষটি আপনি, এই মানুষটি আমি, এই মানুষটি আমরা সবাই। এক সময় বাঙ্গালি জাতি খুবই স¦াচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করত। আর বসবাস করত অভাবমুক্ত। হাহাকার মুক্ত। তাই, মনে পড়ে সেই স্মৃতিগুলো যখন কোকিল তার মধুর কণ্ঠে কুহুকুহু করে ডাকে যখন উত্তরের হিমেল হাওয়া বয় গোমতীর বাঁকে আর ডাকে আয়রে বসন্ত তর শুভযাত্রার ডাকে ফুল ফল, তরুলতা, আম্র মুকুলের গন্ধ গেঁথে আছে আজও মোর প্রাণ জুড়ে মনে পড়ে সেই স্মৃতিগুলো। এইচ এম গোলাম কিবরিয়া রাকিব শিক্ষক,খতিব,টিভি উপস্থাপক, মানবাধিকার কর্মী আজীবন সদস্য-বাংলাদেশ জাতীয় সাংবাদিক ফোরাম।
প্রতিষ্ঠাতা-কুমিল্লা জিলা মদরাসা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ