• রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ পূর্বাহ্ন

বরগুনায় হত্যার পরে ধর্ষণ প্রধান আসামি গ্রেফতার

স্বাধীন ভোর ডেস্ক / ২৭ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় শনিবার, ১ জুলাই, ২০২৩

মোঃ সরোয়ার , বরগুনা প্রতিনিধি
 বাড়িওয়ালার সম্পত্তি নিজের দখলে রেখে মালিক হওয়ার আশায় শ্বাসরোধ করে হত‍্যার পরে ধর্ষণ করেছে এক মাদ্রাসা শিক্ষক। একটি ক্লুলেস হত‍্যাকান্ডের তদন্ত করতে গিয়ে বরগুনা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)র হাতে উঠে এসেছে এমন নারকীয় ঘটনার সকল তথ‍্য। বরগুনা জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ শাখার মোঃ শহিদুল ইসলাম খান বলেন, গত শুক্রবার রাতে বরগুনার বেতাগী উপজেলার মোকামিয়া ইউনিয়নের মাছুয়াখালী গ্রামে বিলকিস বেগম (৫৫) এর বেতাগী থানার ক্লুলেস একটি হত‍্যা মামলা বরগুনা ডিবির উপর তদন্তের নির্দেশ আসলে ২৪ ঘন্টার মধ‍্যেই ঘটনার রহস‍্য উন্মোচন করতে সক্ষম হই। তিনি আরো বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে সবকিছু তদন্তকরে ডাকাতি ও হত‍্যা এত ঘটনা ঘটে গেলে ভাড়াটিয়া আঃ রহমান জুয়েল ও তার পরিবার ঘুমিয়ে ছিল এমন একটি ক্লু-ধরে জুয়েল স্ত্রীকে ডিবি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এক পর্যায়ে বিলকিস বেগম’কে হত‍্যাকরা ও হত‍্যার পরে ধর্ষণের সকল ঘটনা বলে দেয়। হত‍্যার ঘটনার বিষয়ে ডিবি বরগুনা শাখার অফিসার ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম খান বলেন, নিহত বিলকিস বেগম ঈদ উৎযাপন করার জন‍্য ঘটনার দুই দিন আগে ঢাকা থেকে নিজ গ্রামে আসেন। তার স্বামী আঃ মান্নান ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে চাকুরীরত অবস্থায় ২০২০ সালে করোনায় মারা যায়। তার দুই ছেলেও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে চাকুরী করে। ছেলে ও তাদের স্ত্রী এবং নাতি’রা গ্রামের বাড়িতে যাবে বলে বাড়িঘর গোছাতে বাড়িতে আসেন। বাড়ী এসে বাড়িঘর নোংরা করে রাখায় ভাড়াটিয়া ও বাড়ি দেখা-শোনা করার দ্বায়িত্বে থাকা মোকামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক আঃ রহমান জুয়েল (৩৩) এর সঙ্গে কথা কাটা-কাটি ও ঝগড়া হয়।এ-সময় জুয়েল বলে তার স্ত্রী অসুস্থ থাকায় বাড়িঘর নোংরা হয়েছে। তারপরও ঝগড়া-ঝাটি করায় জুয়েল বিলকিস বেগমের সঙ্গে ঝগড়া-ঝাটির বিষয়টি নিয়ে আঃ রহমান তার প্রতিবেশী নির্মাণ শ্রমিক হিরু (৩৮) কে জানায় এবং বলে “প্রতিবার ঢাকা থেকে এসে ঝগড়া-ঝাটি করবে তা আর ভালো লাগেনা। তখন হিরু বলে উপরে পাঠিয়ে দাও, মহিলা মরলে জমি-জমা তোমার হয়ে যাবে। তার ছেলেরা ঢাকায় থাকে, ঢাকায় চাকুরি করে। চাকুরী ছেড়ে তারা আর জমিজমা খেতে গ্রামে আসবেনা। এই জমিজমা তোমার-ই হয়ে যাবে”। তখনই তারা বিলকিস বেগমকে হত‍্যা করার পরিকল্পনা নেয়, হত‍্যা শেষে বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে বলে প্রচার করে দেবে যাতে তারা ধরা-ছোঁয়ার বাহিরে থেকে যাবে। এই কিলিং মিশন সফল করতে তারা তাদের ঘনিষ্ঠজন স্হানীয় মুদি দোকানদার মাসুদ মিয়ার সঙ্গে শেয়ার করে। পরিকল্পনায় তারা মোবাইল ট্রাকিংয়ের ফাঁদে যাতে না পরে তাই বিলকিস বেগমের বাড়ির উঠানে টিউবয়েলে কয়েকটি চাপ দিলে তাদের উপস্থিতি সংকেত নিশ্চিত হবে। শুক্রবার রাতে জুয়েল তার অসুস্থ স্ত্রী’কে জ্বরের ঔষধের পাশা-পাশি ঘুম পাড়িয়ে রাখার জন‍্য এলার্জির ঔষধ খাইয়ে জোড়ে ফ‍্যান ছেড়ে এবং চার্যার ফ‍্যান ছেড়ে স্ত্রী’কে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। মধ‍্যরাতে হিরু এসে টিউবয়েলে জোড়ে জোড়ে কয়েকটি চাপদিলে জুয়েল দরজা খুলে হিরু’কে নিয়ে প্রবেশ করে এবং বাহিরে পাহারা হিসেবে মাসুদ অবস্থান করে। ঘরের মধ‍্যে ঢুকে জুয়েল বিলকিস বেগমের বুকের উপরে উঠে গলা-টিপে ধরে আর হিরু পা চেপে ধরে। এ-সময় ধস্তা-ধস্তি হলে বিলকিস বেগমের বুক থেকে কাপড় সরে যায়। তখন যাতে বিলকিস বেগম কোনো শব্দ করতে না পারে তাই মুখে তোয়ালে পেচিয়ে নেয় এবং শ্বাসরোধ করে হত‍্যা নিশ্চিত করে। জুয়েল ও হিরুর কিলিং মিশন শেষে ঘরের মাল-পত্র তচনছ করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে এবং জানালার গ্রীল কেটে মেঝেতে রাখে যাতে সকলে বুঝতে পারে বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। ঘটনা শেষে জুয়েল বিলকিস বেগমের স্বর্ণালঙ্কার হিরু গরীব বিধায় তাকে দিয়ে দেয়। হিরু চলে যাওয়ার পর জুয়েল পুনরায় বিলকিস বেগমের ঘরে ঢোকে মৃত বিলকিস বেগম’কে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ করার পর বিলকিস বেগমের মরদেহের উপর আঘাত করে যাতে বুঝতে পারে ডাকাতরা বিলকিস বেগম’কে মারধ ও ধর্ষণ করেছে। ধর্ষণ করা শেষে জুয়েল এসে অসুস্থ স্ত্রী’র পাশে ঘুমিয়ে থাকে এবং সকাল সাড়ে সাত-টায় ঘুম থেকে উঠে। ঘুম থেকে উঠে জুয়েল ও তার স্ত্রী বিলকিস বেগম’কে ডাকা-ডাকি করে এবং হিরুকে ফোন দেয়। হিরু আসলে পরে প্রথমে বিলকিস বেগমের জামাতা বেতাগী স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মরত তাকে খবর দেয় পরে ঢাকায় ছেলেদের খবর দেয় বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে এবং বিলকিস বেগমের মৃত্যুর খবর জানায়। বরগুনা ডিবি পুলিশ জুয়েল’কে হত‍্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বরগুনা চীফ জুডিসিয়াল আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দি শেষে জেল হাজতে প্রেরণ করে। রবিবার রাতেই তারা অভিযান চালিয়ে মামলার অন‍্যতম সহযোগী হিরু’কে গ্রেপ্তার করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসে। হিরুর বক্তব্য মতে মঙ্গলবার দিন রাতে পুনরায় অভিযান চালিয়ে মাসুদ’কে গ্রেপ্তার করে। এ-সময় মাসুদের ট্রাংক থেকে বিলকিস বেগমের কানের দুল জব্দ করে। হিরু ও মাসুদকে চীফ জুডিসিয়াল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি শেষে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয় বলে জানান বরগুনা জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ