মোঃ সাইফুল্লাহ
লেখক ও সাংবাদিক
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। প্রতিটি ধর্মের মধ্যেই রয়েছে ধর্মীয় উৎসব। আর, মুসলিমদের জন্য ও রহেছে দুইটি প্রধান উৎসব। প্রধান উৎসব গুলো হলো : * ঈদুল ফিতর ও *ঈদুল আযহা। ঈদুল আযহা কে আমরা কোরবানির ঈদ বলে জানি। এই কুরবানীর ঈদ হলো আত্মত্যাগের ঈদ। কোরবানি যদিও ইব্রাহিম ও ইসমাইল আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম থেকে অনুসরণ করে চালু হয়েছে ,তবে কোরবানির প্রথা চালু হয়েছে আদি পিতা আদম আলাই সাল্লাম এর ছেলে হাবিল ও কাবিল থেকে। তারপর থেকে সকল উম্মতের জন্য এটি জারি ছিল। বর্তমানে ইব্রাহিম আলাই সাল্লাম এর অনুসরণে কোরবানির নিয়ম পালিত হয়। যেমন, সূরা কাওসারে আল্লাহ বলেন, তোমরা সালাত ও কোরবানি আদায় করো তোমাদের প্রভুর জন্য। কোরবান শব্দটি ফার্সি কিংবা কোরবানি শব্দটি উর্দু এর অর্থ “নৈকট্য”। পারিভাষিকভাবে, যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায় তাই কোরবানি। প্রচলিত অর্থে, ঈদুল আযহার দিন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে শরীয়ত মোতাবেক যে পশু যবহ করা হয়, তাকে কোরবান বলে। ঈদুল আজহা হল, জিলহজ্ব মাসের ১০-১১ ও ১২ তারিখ। কোরবানির অনেক গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর কোরবানির পশু সমূহ কে আমরা তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছি, এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে”(সূরা হজ্জ আয়াত:৩৬)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কোরবানি করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়। ঈদুল আযহার সাথে ইব্রাহিম, ইসমাইল ও হাজেরা (আ:) এর পরম স্মৃতি বিজড়িত। এই পরিবার বিশ্ব মুসলিমদের জন্য ত্যাগের মহত্তম আদর্শ। ইব্রাহিম আলাই সাল্লাম আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অনেক ত্যাগ কোরবান করেছেন, তাই তাকে খলিলুল্লাহ বলা হয়।
ঈদুল আযহার দিন করণীয়:
(১) জামাতের সাথে ফজরের সালাত আদায় করা।
(২) মেসওয়াক ও গোসল করা। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন গোসল করতেন।(নাসবুর রায়াহ)
(৩) ঈদুল আযহার নামাজের পূর্বে কিছু না খাওয়া। ঈদুল আযহার দিন প্রথম খাবার হিসেবে কোরবানির গোশত খাওয়া মুস্তাহাব।
(৪) উত্তম পোশাক পরিধান করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক ঈদে ডোরাকাটা কাপড় পরিধান করতেন। (বায়হাকি)
(৫) পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া ও আসা।
(৬) তাকবীর বলা হযরত আবু আব্দুর রহমান সোলামী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন সাহাবায়ে কেরাম ঈদুল ফিতরের তুলনায় ঈদ-উল-আযহায় অনেক বেশি তাকবীর বলতেন। (মুস্তাদদেরকে হাকিম)
তাকবির: আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।
(৭) শিশুদের ঈদগাহে নিয়ে যাওয়া।
(৮) ঈদগাহে নামাজ আদায় করা। তবে যদি বৃষ্টিপাত বা ক্ষতিকর কোন ধরনের সমস্যা হয় তাহলে মসজিদের ভেতরে আদায় করা বৈধ।
(৯) ঈদগাহ থেকে ফেরার সময় রাস্তা পরিবর্তন করে আসা। হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহ থেকে ফেরার পথে রাস্তা বদল করতেন। (বুখারী)
কুরবানীর গোশত বণ্টন :
আল্লাহ তাআলা বলেন, অতঃপর তোমরা উহা আহার কর এবং দুঃস্থ, অভাবগ্রস্থকে আহার করা (সূরা হজ্জ্বে- আয়াত ২৮)। হাদীস শরীফে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরবানির মাংস একভাগ নিজের পরিবারকে খাওয়াতেন, এক ভাগ প্রতিবেশীদের, নিকট আত্মীয়দের দিতেন এবং একভাগ গরিব মিসকিনদের দিতেন।
বিশেষ করে যারা অংশীদার নিয়ে কোরবানি করে, তারা যেন ভাগ করার সময় অনুমান করেই ভাগ না করে, তখন ওজন করে সঠিকভাবে ভাগ করতে হবে যেন কারো ভাগের মধ্যে কম বেশি না হয়। আর যারা গরুর গোশত কাটার জন্য কাজ করে, তাদেরকে অবশ্যই আলাদাভাবে পারিশ্রমিক দিতে হবে। কোরবানির গোশত দিয়ে পারিশ্রমিক দেওয়া যাবে না। এই ক্ষেত্রে সকলকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। অতএব আমরা সকলেই নিয়ত পরিশুদ্ধ করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করব। অহংকার কিংবা মানুষকে দেখানোর জন্য কিংবা নিজে বড়ত্ব প্রকাশ করার জন্য কোরবানি করবো না। একমাত্র আমাদের কোরবানির মূল উদ্দেশ্য থাকবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আল্লাহ তায়ালা ঈদুল আজহার বারাকাহ দান করুন এবং ঈদের খুশি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিক।