• শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৪ অপরাহ্ন

“বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন(ইউজিসি) কতটুকু কার্যকর ভূমিকা রাখছে”?

স্বাধীন ভোর ডেস্ক / ১২০ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় সোমবার, ২৬ জুন, ২০২৩

লেখক: 
এম. তাওহিদ হোসেন 
 শিক্ষার্থী,আইন বিভাগ
খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয় 
ছোট বেলায় মাধ্যমিকে পড়ার সময় ভাবসম্প্রসারণ পড়তে গিয়ে জেনেছি “যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত”। প্রকৃত অর্থে কথাটি সর্বাংশে সত্য তবে আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এ সত্যের মধ্যেও কিছুটা ধোঁয়াশা রয়ে গেছে আর সেটিই স্পষ্ট করার জন্য উপরিক্ত শিরোনাম বেছে নেওয়া। শিক্ষার সংজ্ঞা যদি সরলভাবে দিই তাহলে দাঁড়ায় শিক্ষা  হলো একটি আচরণগত পরিবর্তন । শিক্ষা হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে শেখার সুবিধা বা জ্ঞান , দক্ষতা , মান , বিশ্বাস এবং অভ্যাস অর্জন করা যায়। বাংলা ‘শিক্ষা‘ শব্দটি সংস্কৃত ধাতু শাস থেকে এসেছে । যার অর্থ হল শাসন করা । শিক্ষা শব্দটির সমার্থক শব্দ ‘বিদ্যা’ সংস্কৃত ধাতু বিদ থেকে এসেছে , যার অর্থ হল ‘জানা’ বা ‘জ্ঞান’ অর্জন করা।  শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ Education শব্দটির উৎস কয়েকটি ল্যাটিন শব্দ থেকে । কারো মতে শব্দটি ল্যাটিন Educere থেকে উদ্ভূত , যার ইংরেজি অর্থ হচ্ছে To lead out অর্থাৎ শিশু এবং শিক্ষার্থীর মনের মধ্যে যে সব মানসিক শক্তি জন্মসূত্রে বিদ্যমান সেগুলিকে বাইরে আনা। অর্থাৎ, শিক্ষার সংজ্ঞাকে এক কথায় সংজ্ঞায়ণ করে বলা যায়, মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তিকে বের করে আনার পদ্ধতি হলোই শিক্ষা আর মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তিকে বের করে আনার প্রচেষ্টা করা হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। আমাদের দেশে একজন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক স্তর থেকে নিম্ম মাধ্যমিক,  মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পাড়ি দিয়ে আসতে হয় উচ্চ শিক্ষার স্তরে।প্রাথমিক, নিম্ম মাধ্যমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষাকে পরিপূর্ণতা প্রদান করে এই উচ্চ শিক্ষা স্তর অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থী তার জানাকে পূর্ণাঙ্গভাবে পরিশীলিত করার চেষ্টা করে মানুষের ভিতরে লুকিয়ে থাকা সেই অন্তর্নিহিত শক্তিকে জাগ্রত করে শিক্ষার প্রকৃত সংজ্ঞাকে ধারণ করে। বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে বর্তমানে কমবেশি সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে ১৫০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আর এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো-মন্দ দেখভালের জন্য আছে অভিভাবক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা সংক্ষেপে ইউজিসি।বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন(ইউজিসি)১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২ সালে স্থাপিত হয়। এটি বাংলাদেশের সকল সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। মূলত সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এই সংস্থাটি সমন্বয়সাধন করে থাকে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সমন্বয়, নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা এবং বিকাশ ঘটানো। সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার মানরক্ষা এবং নিয়ন্ত্রণও এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন সরকারকে উচ্চশিক্ষার সামগ্রিক বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হয় দেশের পাবলিক তথা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশের সংগ্রামী ইতিহাস রচনা, দেশ গঠন এবং দেশকে পরিচালনার নেপথ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণা, উদ্ভাবন এবং সার্বিক কলা কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে একটি টেকসই জাতি গঠনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলিয়ে কাজ করে।কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে মান কতটা নিম্নমুখী সেটি পত্র-পত্রিকা খুললেই দেখা যায়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার নামে বর্তমানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বেশি দেখা যায়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অপর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের(যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে) ছাত্র নেতাদের দ্বারা নিরীহ শিক্ষার্থীদের নিয়মিত নিগৃহ ও প্রহার, গণরুমের টর্চার সেল, ছিনতাই, মাদক কারবারি, নারী ঘটিত নানা অপরাধসহ এহেন কোন কর্মকাণ্ড নাই যেখানে ছাত্রনেতারা যুক্ত হচ্ছে না। দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তির সুযোগ লাভ করে কেন পথহারা হচ্ছে সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওয়াকিবহাল থাকছে না।সেই সঙ্গে এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে ইউজিসি ব্যর্থ হচ্ছে। উচ্চ শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণ এবং শিক্ষার্থীদের সার্বিক কল্যাণের জন্য অভিভাবক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইউজিসি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরের বছর ফেব্রুয়ারি মাসে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও কার্যত নখদন্তহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসিত চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়(ঢাবি,জাবি, রাবি,চবি) ইউজিসির সিদ্ধান্তকে সবসময় বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আসছে সেই সঙ্গে বাকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ইউজিসির সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেয় না। শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম,উন্নয়নের টাকা ভাগ বাটোয়ারা, গবেষণার প্রতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি না করা, ক্ষমতাসীন ছাত্রনেতাদের দ্বারা নিগৃহীত শিক্ষার্থীদের বিচার এবং অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে নীরব থাকা, প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক নেতাদের ন্যায় সভা-সমাবেশ, মিছিল, মিটিং আর বিবৃতি দেওয়া এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক/শিক্ষিকাদের দৈনন্দিন রুটিন হয়ে পড়েছে। আর এ ব্যাপারে ইউজিসি কার্যকর কোন পদক্ষেপই নেয় না, যতটুকুও নেয় সেটি রাজনৈতিক চাপের মুখে গতি হারায় যা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিভাবক  হিসেবে ইউজিসির জন্য চরম ব্যর্থতার পরিচয় বহন করে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা নির্দিষ্ট থাকায় এবং আসন সংখ্যার তুলনায় শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হওয়ায় ১৯৯২ সালে দেশে প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বপ্ন বোনা শুরু হয়েছিল যে, দেশের উচ্চ শিক্ষা বিস্তার এবং গুণগত মান নিশ্চিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে কেননা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে  প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক কোন কার্যক্রম নেই সেই সঙ্গে ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক গবেষণা খাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিয়ে গবেষণায় উৎকর্ষ সাধন করে একটি দক্ষ জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ জনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশে বর্তমানে ১১৩ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গুটি কয়েক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া গবেষণা এবং সামগ্রিক গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছে আর এ ব্যাপারে ইউজিসি নির্বিকার হয়ে বসে আছে। বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান এবং ট্রাস্টি বোর্ড হচ্ছে ব্যবসায়ী। ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিহিত করলেও দৃশ্যত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপ নিয়েছে। প্রায় প্রতি বছরই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ব্যবসায়ী ব্যক্তিদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার অনুমতি দিচ্ছে। নিয়মের তোয়াক্কা না করে, ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদেরকে জিম্মি করে মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ধারা ৬(২) এর বিধিতে বলা আছে “পাঠদানের নিমিত্তে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি, মিলনায়তন, সেমিনার কক্ষ, অফিস কক্ষসহ অন্যান্য কক্ষের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকবে কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশের বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এসবের সু-ব্যবস্থা থাকছে না। যত্রতত্র বিল্ডিং ভাড়া করে বিপনী বিতানের মধ্যেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে যেখানে মিলনায়তন তো দূরে থাক পর্যাপ্ত সংখ্যক ক্লাস রুমও থাকছে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ধারা ৬(৬) এর বিধি অনুযায়ী প্রত্যেক বিভাগে প্রোগ্রাম ও কোর্স পরিচালনার জন্য কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত পূর্ণকালীন যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশের বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে আর এ ব্যাপারে ইউজিসি কার্যত কোন ব্যবস্থায়ই নেয় না। প্রতি বছর ইউজিসি’র প্রতিনিধি দল নিরীক্ষার জন্য আসলেও এ ব্যাপারে স্বচ্ছ কোন জবাবদিহিতা নেয় বলে মনে হয় না কারণ বছরের পর বছর নিরীক্ষা হলেও দৃশ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ধারা ১৪ এর বিধি অনুযায়ী প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে
ক) বোর্ড অব ট্রাস্টিজ;
(খ) সিন্ডিকেট
(গ) একাডেমিক কাউন্সিল;
(ঘ) অনুষদ;
(ঙ) ইনস্টিটিউট;
(চ) পাঠক্রম কমিটি;
(ছ) অর্থ কমিটি;
(জ) শিক্ষক নিয়োগ কমিটি; এবং
(ঝ) শৃংখলা কমিটি থাকবে কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এসব কমিটির অধিকাংশ কমিটিই দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন মেনে কোন কমিটিই গঠন করা হয় না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ধারা ২২ এর বিধি অনুযায়ী প্রত্যেক বিভাগীয় প্রধান স্ব স্ব অনুষদের ডিনের মাধ্যমে উপাচার্যের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে উপাচার্যের সুপারিশ এবং নির্দেশনা মতো বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম গতিশীল রাখবে কিন্তু বাস্তবিক ভাবে দেখা যায় দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদগুলোতে ডিন নিয়োগ দেওয়া হয় না। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য স্বয়ং নিজেই অনুষদের ডিন হয় আবার ডিন নিয়োগ দেওয়া হলেও ক্যাম্পাসে সশরীরে না আসার শর্তে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের পরিপন্থী।  বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ধারা ২৭ এর বিধি অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রত্যেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিম্নবর্ণিত সদস্যগণের সমন্বয়ে একটি শিক্ষক নিয়োগ কমিটি গঠিত হইবে,
(১) ভাইস-চ্যান্সেলর, যিনি ইহার সভাপতিও হইবেন;
(২) প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর
(৩) বোর্ড অব ট্রাস্টিজ কর্তৃক মনোনীত ৩ (তিন) জন শিক্ষানুরাগী
(৪) সিন্ডিকেট কর্তৃক মনোনীত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ২ (দুই) জন বিশেষজ্ঞ
(৫) সংশ্লিষ্ট ডীন এবং
(৬) সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় বা ইনস্টিটিউট প্রধান, যিনি অধ্যাপক পদ-মর্যাদার নীচে নহেন অথচ শিক্ষক নিয়োগে দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ কমিটির সমন্বয়ের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দেয় না তাছাড়া বাংলাদেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে অধ্যাপক বা অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষক নিয়োগই দেয়া হয় না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ধারা ২৮ এর বিধি অনুযায়ী ) প্রত্যেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিম্নবর্ণিত সদস্যগণের সমন্বয়ে একটি শৃংখলা কমিটি থাকিবে,
(ক) বোর্ড অব ট্রাস্টিজ কর্তৃক মনোনীত ১ (এক) জন সদস্য যিনি ইহার সভাপতি হইবেন;
(খ) ভাইস চ্যান্সেলর;
(গ) সকল অনুষদের ডীনগণ;
(ঘ) সিন্ডিকেট কর্তৃক মনোনীত ১ (এক) জন বিভাগীয় প্রধান;
(ঙ) রেজিস্ট্রার;
(চ) প্রক্টর, যিনি ইহার সদস্য-সচিবও হইবেন।
(২) শৃংখলা কমিটির কার্য-পরিধি সিন্ডিকেট কর্তৃক নির্ধারিত হইবে।
(৩) শৃংখলা কমিটি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পর্যায়ের শৃংখলা নিশ্চিত করিবে।
(৪) শৃংখলা কমিটি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি ও যৌন নিপীড়নসহ সকল পর্যায়ের শৃঙ্খলা বিরোধী আচরণের প্রতিকার ও শাস্তির লক্ষ্যে এতদ্সংক্রান্ত অভিযোগ দাখিল, তদন্ত ও শুনানীর জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও তদনুযায়ী দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়া প্রয়োজনীয় সুপারিশ সম্বলিত প্রস্তাব সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের জন্য পেশ করিবে।
(৫) শৃংখলা কমিটির কোন সদস্যের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উত্থাপিত হইলে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ অনতিবিলম্বে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করিবে, যাহাদের মধ্যে দুইজন বোর্ড অব ট্রাস্টিজ-এর সদস্য, দুইজন সিন্ডিকেট সদস্য এবং একজন আইনজ্ঞ থাকিবেন।
(৬) উপ-ধারা (৫) এর অধীন গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে, এই আইনের বিধান অনুযায়ী, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ শৃংখলা কমিটির সংশ্লিষ্ট সদস্যের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে অথচ দেশের সিংহভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এসব কমিটির সমন্বয়ের তোয়াক্কা না করেই শুধুমাত্র প্রক্টর এর মাধ্যমে শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করে যেখানে অভিযুক্তকারীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগই দেওয়া হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নিজের ইচ্ছামাফিক আর কর্তৃপক্ষের চাহিদা চাওয়া মতো জুজুর ভয় দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের দমন করার নীতি নিয়মিত চর্চা করে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ধারা ২৯ এর বিধি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য নিয়োগের কথা বলা হলেও বর্তমানে দেশের ৫০ টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নেই কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোন উপ-উপাচার্যই নিয়োগ দেওয়া হয় নি।
এছাড়াও ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বেশ কিছু গলদও রয়ে গেছে। ধারা ৩১(১) এর বিধি অনুযায়ী ট্রাস্টি বোর্ডের সুপারিশকৃত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার যথাযথ মান নিশ্চিত করবে না কারণ ট্রাস্টি বোর্ড কখনো নিজের আজ্ঞাবহ, পচ্ছন্দের লোক ছাড়া উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিবে না।
এসব আরো অনিয়মে জর্জরিত দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আর সেসব অনিয়ম রোধ করে সুন্দর একটি শিক্ষার্থীবান্ধব শেখার পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দায়িত্ব কিন্তু বাস্তবিক অর্থে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রতিবছরে একবার নিরীক্ষা তথা অডিটের জন্য প্রতিনিধি আসলে জোড়াতালি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তাব্যক্তিরা তাদের অন্যায় ঢেকে প্রতিনিধি দলের চোখকে ফাঁকি দিচ্ছে আর প্রতিনিধি দলও হুইসেল বাজিয়ে জানান দিয়ে অডিটে আসছে যার জন্য শুভংকরের ফাঁকি দেওয়াও কর্তাব্যক্তিদের কাছে সহজ হচ্ছে। বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিভাবক হিসেবে ইউজিসি’র ভূমিকা তাই আজ প্রশ্নবিদ্ধ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ