ইব্রাহীম মিঞা বিরামপুর(দিনাজপুর)প্রতিনিধি
দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার জমিদার বাড়িটি যুগ-যুগ ধরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ইতিহাস-ঐতিহ্যসমৃদ্ধ এই জমিদার বাড়িটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসেন বহু পর্যটক। অনেকে ভবনের ভেতরে-বাইরে ছবি তোলেন। সংষ্কার করলে এটি একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ৩নং খানপুর ইউনিয়নের রতনপুর বাজারের উত্তরে জমিদার বাড়িটি অবস্থিত। বিরামপুর উপজেলার প্রবীন রাজনীতিবিদ জেলা ন্যাপের সহ-সভাপতি আব্দুল আজিজ সরকার জানান,অষ্টাদশ শতাব্দীতে বিরামপুরসহ আশপাশের অঞ্চলগুলোতে প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করার জন্য ব্রিটিশরা ফুলবাড়ী জমিদারের পক্ষে রাজকুমার সরকারকে রতনপুর কাচারিতে পাঠায়। কিন্তু রাজকুমারের মেধা আর কৌশল তার ভাগ্যের চাকা বদলে দিয়েছিল। রাজকুমারের খাজনা আদায়ে পারদর্শিতা ও নৈপুণ্যে জমিদার সাড়ে ছয় শ’ বিঘা জমি উপহারসহ তার নিজের বোনের সঙ্গে রাজকুমারের বিয়ে দেন। সৌভাগ্যক্রমে সাধারণ খাজনা আদায়কারী থেকে তিনি জমিদার বনে যান। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় রঘু হাসদা নামের এক ধন কুবেরের কাছ থেকে টাকা নিয়ে অন্য জমিদারদের ৩শ’ বিঘা জমি কিনে নেন। এ ঘটনার ২বছর পর আবারো রঘু হাসদার আড়াইশো বিঘার ফলের বাগান দখল করে নেন। পরে তাকে এলাকাছাড়া করেন। পরে তিনি বিলাসবহুল অভিজাত সুদৃশ্য দ্বিতল অট্রালিকা নির্মাণ করেন। কিন্তু তার এ সুখ বেশী দিন স্থায়ী হয়নি। তার এক ছেলে রতন পানিতে ডুবে মারা যায়। এতে তিনি শোকে বিহবল হয়ে পড়েন। পরে তিনিও মারা যান। পরে তার আরেক ছেলে রখুনী কান্ত বাবু জমিদার হন।জমিদার রখুনী কান্তর দরবারে প্রতিবেশী কেউ গেলে প্রস্থানের পর উক্ত স্থান ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হতো। জমিদারের কোনো সন্তান ছিল না। ১৯৭১ সালে এ দেশে স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হলে জমিদার রখুনী কান্ত বাবু স্ত্রীকে নিয়ে একটি মহিষের গাড়িতে করে রাতের আঁধারে ভারতের কলকাতায় তার বংশধরদের কাছে চলে যান। বর্তমানে জমিদারবাড়ির পাশে রয়েছে ইসলামিক মিশন, মাদ্রাসা, মসজিদ, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানসহ বিশাল একটি পুকুর।রখুনী কান্ত বাবুর ১২শ বিঘা জমি ফলদ, বনজ ও ওষধি বাগান রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির অভাবে অনেক সম্পত্তি বিলীন ও বেদখল হয়ে গেছে।বর্তমানে অযত্ন-অবহেলায় ধ্বংস হতে বসেছে জমিদার বাড়িটি। ইতোমধ্যে ভেঙে পড়তে শুরু করেছে এর অবকাঠামো।
জমিদার বাড়ি পর্যটনে আসা পর্যটক জামিল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন বাড়িটি প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহাসিক নিদর্শনের প্রতীক। সংশ্লিষ্টদের উচিত এটি রক্ষণাবেক্ষণ করা। বাড়িটির সংস্কার হলে আরও সুন্দর লাগবে। তখন দর্শনার্থীদের সমাগম বাড়তে পারে। বিরামপুর উপজেলার ৩নং খানপুর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান চিত্ত রঞ্জন পাহান জানান এটি সংস্কারের জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট একটি প্রস্তাবনা দেওয়া আছে আশা করি জেলা প্রশাসক মহোদয় এটি সংস্কারের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।