নির্বাচনে জয়ীদের শুভেচ্ছা জানানোর রেশ কাটতে না কাটতেই এবার মন্ত্রিসভায় কে আসছেন আর বাদ পড়ছেন—এই আলোচনা জোরালো হয়েছে আওয়ামী লীগে। বেশ কিছু নতুন মুখ নিয়ে নানা আলোচনা করছেন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। তবে কারও কাছেই নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন দিনের মাথায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে দলটি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান হবে। এর আগে আজ বুধবার সকালে সংসদ সদস্যদের শপথ পড়াবেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। গতকাল বিজয়ী সংসদ সদস্যদের মধ্যে ২৯৮ জনের গেজেট প্রকাশের বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানিয়েছে, এবারও শুধু আওয়ামী লীগেরই মন্ত্রিসভা হবে। অর্থাৎ ২০০৮ ও ২০১৪ সালের মতো জাতীয় পার্টি কিংবা ১৪ দলের শরিকদের কাউকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়ার সম্ভাবনা নেই।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রগুলো বলছে, ৪৫ সদস্যের মন্ত্রিসভার মধ্যে অন্তত ১৫ জন বাদ পড়তে পারেন। বয়স, নানা বিতর্ক ও অদক্ষতার দায়ে এসব মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বাদ যেতে পারেন। এর মধ্যে টানা তিন মেয়াদে মন্ত্রিসভায় আছেন, এমন নেতাও বাদ পড়তে পারেন। এর বাইরে মন্ত্রিসভার তিনজন সদস্য নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন এবং তিনজন দলের মনোনয়নই পাননি।
এবার যে তিনজন প্রতিমন্ত্রী পরাজিত হয়েছেন, তাঁরা হলেন ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। এর আগে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
এ ছাড়া বর্তমান মন্ত্রিসভায় থাকা দুই-তিনজন প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর পদোন্নতি হতে পারে—এমনটিও আলোচনা করছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা। সর্বশেষ মন্ত্রিসভায় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এবং কম পরিচিত অনেককে স্থান দিয়ে আলোচনার জন্ম দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারও এমন দু-একটা চমক থাকতে পারে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা তিন-চারবার সংসদ সদস্য হলেও অতীতে মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। এবার এমন তিন-চারজনের নাম আলোচনায় আছে। এ ছাড়া ২০০৮ ও ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভায় ছিলেন এমন কয়েকজনের ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে বলে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানিয়েছে, এবারও শুধু আওয়ামী লীগেরই মন্ত্রিসভা হবে। অর্থাৎ ২০০৮ ও ২০১৪ সালের মতো জাতীয় পার্টি কিংবা ১৪ দলের শরিকদের কাউকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, এমনিতে আওয়ামী লীগের বাইরে মাত্র চারটি দলের সংসদে প্রতিনিধিত্ব আছে। ফলে প্রকৃত বিরোধী দল থাকছে না—এমন সমালোচনা রয়েছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের বাইরে থেকে আর কাউকে মন্ত্রিসভায় স্থান দিলে সরকারবিরোধী পক্ষ বলে কিছুই থাকবে না।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে শপথ হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে যাঁরা মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন, কাল সকাল থেকেই হয়তো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে তাঁদের ফোন করে শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো শুরু হবে।
গতকাল বিকেলে আওয়ামী লীগের তেজগাঁও কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে মহানগর নেতাদের একটি বৈঠক ছিল। তেজগাঁও কার্যালয়ে সভার পর নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, কাকে নিয়ে সামনের পথ চলবেন, কী হবে তাঁর টিম—এটা প্রধানমন্ত্রীর একান্ত এখতিয়ার। এ বিষয়ে আগাম কিছু বলা যাবে না।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন সম্পন্ন করার মাধ্যমে রাজনীতির চ্যালেঞ্জ পার করা হয়েছে। সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ অর্থনীতি। এই সংকটের সময় দক্ষ ও যোগ্য মন্ত্রিসভা গঠন করা না হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে। দলের নীতিনির্ধারকদের মাথায় নিশ্চয়ই বিষয়টি আছে।
আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা গতকাল নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেকে বাদ পড়বেন এটা বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু কারা আসছেন বা বাদ পড়ছেন এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ জানেন না।