• মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন

মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ সৎ মায়ের বিরুদ্ধে

স্বাধীন ভোর ডেস্ক / ১৮ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

কুমিল্লা প্রতিনিধি

কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধা বাবার মৃত্যুর পর ভাতা বন্ধ করতে সৎ মা ও সৎ ভাইবোনরা মো. শফিক (৫২) নামের এক ব্যক্তিকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ ওঠেছে।

শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুমিল্লা নগরীর একটি রেস্টুরেন্টের হলরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন শফিক।

ভুক্তভোগী শফিক জেলার মুরাদনগর উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ ইউনিয়নের কালাডুমুর এলাকার মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলামের ছেলে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তার বাবা মফিজুল ইসলাম একজন সেনাকর্মকর্তা ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে সরকারিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকে তার বাবা নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে আসেন।

তিনি আরও বলেন, তার (মুক্তিযোদ্ধা মফিজের ছেলে শফিকের) বয়স যখন ৪ বছর তখন তার মায়ের সাথে বাবার বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। পরে নাবালক শিশু শফিকের কথা চিন্তা করে ৪-৫ বছর পরে মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলাম আয়েশা বেগম নামের এক নারীকে বিয়ে করেন।

বিয়ের পর থেকেই শফিক তার সৎ মায়ের রোষানলে পড়তে থাকেন। পরে শফিক সৎ মায়ের রোষানল থেকে বাঁচতে নানার বাড়িতে আশ্রয় নেন এবং সেখানেই বেড়ে ওঠেন। অপরদিকে তার সৎ মা ২জন ছেলে ও ৩জন মেয়ের জন্ম দেন।

তিনি বলেন, প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর তার জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সকল কাগজপত্রে বাবার নাম মফিজুল ইসলাম উল্লেখ করেন শফিক। শফিকের বাবার বাড়ি আর নানার বাড়ি একই গ্রামে। পুরো এলাকার মানুষ সবকিছুর বিষয়ে অবগত আছেন।

২০২৩ সালের রমজান মাসে মৃত্যবরণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলাম। তার মৃত্যুর পর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ সালিশে বসেন। তাতে কাজ না হওয়ায় মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনওর) কাছে আবেদন করলে ইউএনও সিফাত উদ্দিন উভয় পক্ষকে ডেকে, কাগজপত্র যাচাই করে সৎ মা আয়েশা বেগম এবং শফিকের মাঝে দুইভাগে বন্টন হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে ব্যাংক হিসাব নম্বর খোলেন শফিক। গত আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে ভাতার ২০ হাজার টাকার অর্ধেক ১০ হাজার টাকা শফিকের ব্যাংক হিসাবে আসে। তাতেই চটতে শুরু হন সৎ মা আয়েশা বেগম।

শফিকের ভাতা বন্ধ করতে নানান কৌশল অবলম্বন করেন সৎ মা আয়েশা। কোনো কৌশলে কাজ না হওয়ায় কিছুদিন আগে আদালতে শফিকের নামে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় শফিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলামের ছেলে নয়, সে প্রতারণা করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন, ভোটার আইডিসহ সব কাগজপত্র ভুয়া বানিয়ে মফিজুল ইসলামের ছেলে সেজেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করেন সৎ মা আয়েশা।

শফিক আরও বলেন, ওই মামলার তদন্ত দেওয়া হয়েছে পিবিআইকে। পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শামসুদ্দিন মামলাটির তদন্ত করতে গিয়ে আমার ভোটার আইডি, জন্মসদন যাচাই করেননি। এমনকি এলাকার মানুষদেরও জিজ্ঞেস করেননি আমি মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলামের ছেলে কিনা। তিনি সেসব না করেই আমাদের বাড়ি গিয়ে শুধু বলেছেন আপনার ডিএনএ টেস্ট করতে হবে বলে চলে আসেন।

ভুক্তভোগী শফিক বলেন, আমার ডিএনএ করতে কোনো আপত্তি নেই। তবে আমি একজন খেটে খাওয়া মানুষ আমার কাছে কোনো টাকা পয়সা নেই। অপরদিকে আমার সৎ মা আমার মৃত বাবার সকল সহায়-সম্পত্তি ভোগ করছেন। তাদের টাকা পয়সার অভাব নেই। টাকা দিয়ে যদি ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল পাল্টে দেওয়া হয় তাহলে ন্যায় বিচার নিয়ে শঙ্কায় আছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে মামলার বাদী ও শফিকের সৎ মা আয়েশা বেগমকে ফোন করা হলে তার মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুমিল্লা পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শামসুদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালতে মামলা দায়েরের পর আদালত পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সঠিক প্রতিবেদন আদালতে জমা দিবো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ