• শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৭ অপরাহ্ন

নওগাঁতে আধুনিক কৃষি পদ্ধতিতে আদা চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন দুই কলেজ শিক্ষার্থী

স্বাধীন ভোর ডেস্ক / ৩৭ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪

মোঃ এ কে নোমান, নওগাঁ

নওগাঁ জেলার সদর উপজেলায় দুই কলেজ পড়ুয়া ছাত্র পরীক্ষামূলকভাবে আদা চাষ করে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছেন। তাদের উদ্ভাবনী চাষাবাদ পদ্ধতি ও পরিশ্রমী প্রচেষ্টার ফলে তাদের ফসলের উৎপাদন অন্যান্য কৃষকদের জন্য একটি প্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে। জানা যায়, তারা নওগাঁ শহরের পৌরসভা এলাকার ভড়িয়া পাড়ার বাসিন্দা আলহাজ্ব মো. আবু রেজার ছেলে মো. রাদি হাসান ও মো. মামুনুর রশিদের ছেলে সিয়াম সাদি অমি। অমি ও রাদি, উভয়ই নওগাঁ সরকারি কলেজের অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র। তাদের কৃষির প্রতি আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই ছিল, এবং তারা সবসময়ই কিছু নতুন ও লাভজনক ফসল চাষ করার স্বপ্ন দেখতেন। এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে তারা সিদ্ধান্ত নেন যে, তারা কিছু নতুন ফসল চাষ করবেন, যা প্রচলিত ফসলের চেয়ে অধিক লাভজনক হবে। তাদের এই উদ্ভাবনী চিন্তা-ভাবনার ফলস্বরূপ তারা আদা চাষের সিদ্ধান্ত নেন এবং প্রায় ১৩ শতাংশ জমিতে ১৮০০ বস্তায় পরীক্ষামূলক বীজ রোপন করেন। এতে প্রয়োজন হয় ১২০ কেজি বীজ৷ এছাড়াও কাঁটা তারের বেড়া সহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিপত্র কিনতে তাদের ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ব্যয় হয় বলে জানান। আদা চাষের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য তারা স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করেন এবং ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, তারা স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তা নেন এবং আধুনিক চাষাবাদের কৌশল সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন। সঠিক মাটি প্রস্তুত করা, উচ্চমানের বীজ নির্বাচন, সঠিক সেচ ব্যবস্থা এবং সঠিক সময়ে সার প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয়গুলো তারা গুরুত্ব সহকারে অনুসরণ করেন। মাটি প্রস্তুত করার পর তারা আদার বীজ রোপণ করেন এবং নিয়মিতভাবে ফসলের যত্ন নেন। তারা জৈব সারের ব্যবহার ও সমন্বিত পোকা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন।সিয়াম সাদি অমি বলেন, “প্রথমে আমরা বেশ চিন্তিত ছিলাম, কারণ আদা চাষ আমাদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন একটি অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু আমরা ধৈর্য ধরে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করেছি এবং আল্লাহর রহমতে ভালো ফলাফল পেয়েছি।”রাদি হাসান বলেন, “এই উদ্যোগ থেকে আমরা শুধু আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চিন্তায়, নয়, বরং আমাদের চাষাবাদের প্রতি আরও আগ্রহ ও আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। আমরা ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই চাষাবাদকে আরও সম্প্রসারিত করতে চাই।”তাদের এই সফলতা স্থানীয় অন্যান্য যুবকদেরও উদ্দীপিত করেছে। স্থানীয়রা জানান, “অমি ও রাদির সফলতা আমাদের সকলের জন্য গর্বের বিষয়। তাদের এ উদ্যোগ স্থানীয় কৃষকদের জন্য একটি মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা আশা করি আরও যুবকরা কৃষির প্রতি আগ্রহী হবে এবং আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি গ্রহণ করবে।”অমি ও রাদির এই সফলতা তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে। আদা চাষের মাধ্যমে তারা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে লাভ করেছেন, যা তাদের পরিবারকে আর্থিকভাবে স্থিতিশীল করেছে। তাদের এই উদ্যোগ অন্যান্য যুবকদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করেছে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তারা ভবিষ্যতে এই চাষাবাদ আরও সম্প্রসারিত করতে চান এবং আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। তারা আশা করেন যে, তাদের এই উদ্যোগ স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে আরও প্রশংসিত হবে এবং অন্যান্য কৃষকদেরও অনুপ্রাণিত করবে। ওমি ও রাদির উদ্যোগ কেবল তাদের ব্যক্তিগত উন্নতিতে সীমাবদ্ধ নয়। তাদের এই চাষাবাদ প্রক্রিয়া স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করেছে। তাদের সাফল্য অন্যান্য যুবকদেরও কৃষি উদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহিত করছে। পরিবারের সদস্যরাও এই সফলতায় আনন্দিত। অমির মা বিউটি আকতার জানান, “আমার ছেলের এই সাফল্যে আমি গর্বিত। আমরা সবসময়ই তার পাশে আছি এবং তার সকল উদ্যোগকে সমর্থন জানাবো।”রাদির বাবা আলহাজ্ব মো: আবু রেজা জানান, “আমাদের সন্তানেরা কৃষিতে যে সাফল্য দেখিয়েছে, তা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আমরা তাদের এই উদ্যোগকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি এবং তাদের পাশে থাকবো।”নওগাঁয় এই দুই তরুণের উদ্ভাবনী উদ্যোগ ও সফলতা অন্যান্য যুবকদের জন্য একটি প্রেরণা হয়ে থাকবে। তাদের এই সফলতা স্থানীয় কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করেছে এবং প্রমাণ করেছে যে সঠিক পরিকল্পনা, পরিশ্রম এবং উদ্ভাবনী চিন্তা-ভাবনা দিয়ে যে কোন কাজেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব। অমি ও রাদি এই চাষাবাদ কার্যক্রম স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে একটি নতুন উদ্যম সৃষ্টি করেছে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে একটি নতুন গতি সঞ্চার করেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ