• শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৯ অপরাহ্ন

তফসিলকে প্রত্যাখান করে একদফা দাবিতে মাঠের আন্দোলনে ব্যস্ত বিএনপি

ভোটের কার্যক্রম আওয়ামী লীগের শুরু

স্বাধীন ভোর ডেস্ক / ৬৯ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই সারা দেশে নির্বাচনের আবহ তৈরিতে পুরোদমে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে করা হয় মিষ্টি বিতরণ। ভোটের মাঠে এগিয়ে থাকতে এলাকায় এলাকায় বেড়েছে প্রার্থীদের আনাগোনা এবং মনোয়নের জন্য শুরু করেছেন দৌড়ঝাপ। দলের তৃণমূল নেতারাও ভোট ঘিরে উৎসবের আমেজে মেতেছেন। বিএনপির হরতাল-অবরোধসহ নানা কর্মসূচি মোকাবিলা করেই ভয়কে জয় করতে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট করতে পুরোদমে প্রস্তুতি চলছে আওয়ামী লীগে। অন্যদিকে তফসিলকে প্রত্যাখান করে একদফা দাবিতে মাঠের আন্দোলনে ব্যস্ত বিএনপি সহ সমমনা দলগুলি। দফায় দফায় অবরোধ ও হরতালের মাধ্যমে সরকারকে চাপ প্রয়োগের চেষ্টায় রয়েছেন। নির্বাচনের সময় যতই গনিয়ে আসবে ততই জন সম্পৃক্তা বাড়িয়ে আন্দোলনকে তীব্র ও বেগবান করার কথায় জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সর্বস্তরের নেতা-কর্মী মাঠে নেমে রাজপথে শক্ত অবস্থান নিতে যাচ্ছে বিরোধীদল। দুই সপ্তাহের বেশি টানা অবরোধ কর্মসূচির পর আগামী রবি ও সোমবার টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে দলটি।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর এখনো প্রকাশ্যে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেনি জাতীয় পার্টি। তবে দলটির একটি অংশ নির্বাচনে যোগ দিবে বলে একাধিক সুত্র জানিয়েছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হবে আজ শনিবার। এদিন সকাল ১০টায় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে নিজের ফরম সংগ্রহ করে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। শুক্রবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
এরই মধ্যে দলীয় সভাপতির আগমন উপলক্ষে বিশেষ সাজে সাজানো হয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। বিভাগভিত্তিক বুথ ও স্বেচ্ছাসেবক নির্ধারণ করা হয়েছে। দিনব্যাপী বিভাগীয় নেতাদের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবকরা মনোনয়ন ফরম বিক্রি করবেন।
এর আগে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ। দলটির নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, বিএনপির পক্ষে ভোট ঠেকানো সম্ভব নয় এটা মানুষকে বোঝাতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। এখন লক্ষ্য হচ্ছে দল ও বিএনপির নেতাদের বোঝানো যে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর চাপও ভোটের পথে বাধা হতে পারবে না। ফলে যাঁরা কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন, তাঁরা ভোটে আসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এরপরও লক্ষ্য পূরণ না হলে চাপ বাড়ানো হবে।
গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের তেজগাঁও কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বিএনপিসহ আরও অনেক দল নির্বাচনে না এলে এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কি না। জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সামনের কয়েকটা দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (ক্রুশিয়াল)। ৩০ নভেম্বর মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। এর মধ্যে কত ফুল ফুটবে। এখন কোন ফুল কোথায় ফুটছে…হঠাৎ জেগে উঠবে। অপেক্ষা করুন।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং কর্মকৌশল ঠিক করতে তিনটি কার্যালয় ব্যবহার করবে আওয়ামী লীগ। দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হবে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সেখানে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে। ফরম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২১ নভেম্বর। ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার জন্য ১০টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এবার প্রতিটি ফরমের দাম ধরা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। ফরম জমা নেওয়া শেষ হলে বৈঠকে করে সিদ্ধান্ত নেবে মনোনয়ন বোর্ড।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ এবং তৃতীয় তলায় রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় সব বিভাগের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হবে।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অতিরিক্ত লোকসমাগম ছাড়া আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থী নিজে অথবা প্রার্থীর একজন যোগ্য প্রতিনিধির মাধ্যমে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা প্রদান করতে হবে। আবেদনপত্র সংগ্রহের সময় অবশ্যই প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সঙ্গে আনতে হবে এবং ফটোকপির ওপর মুঠোফোন নম্বর, বর্তমান সাংগঠনিক পরিচয়সহ তিনটি পদ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
নতুন করে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি সাজানো হয়েছে নির্বাচন সামনে রেখে। সেখানে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার জন্য একটি কক্ষ রাখা হয়েছে। ওই কক্ষ থেকে ভার্চ্যুয়ালি সারা দেশে যোগাযোগ করা এবং কর্মসূচি পালনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বসানো হয়েছে।
কয়েক দিন ধরেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনের কৌশল ঠিক করতে সাবেক সচিব ও পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি দল নিয়মিত বসছেন। গত বৃহস্পতিবারও তাঁদের বৈঠক করতে দেখা গেছে। এই দলে রয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. সাদিক, সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সাবেক কূটনীতিক সোহরাব হোসেন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার ও ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া।
গত কয়েকটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়টি বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। এবার ওই কার্যালয় গবেষণাধর্মী কর্মকাণ্ড এবং প্রচারসংক্রান্ত কার্যক্রমে ব্যবহৃত হবে। এরই মধ্যে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের নেতৃত্বে একটি দল সেখানে প্রচার-প্রচারণা বিষয়ে কিছু কার্যক্রম শুরু করেছে। এ ছাড়া গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহের কাজ সেখানে সারা বছর ধরেই চলে।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, প্রতীক বরাদ্দ হবে আগামী ১৮ ডিসেম্বর। ওই দিন থেকেই ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সিলেট থেকে এবারের নির্বাচনের প্রচার শুরু করবেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী যাত্রা কাঙ্ক্ষিত গতিতে চলা শুরু করেছে। এখন আর পেছনে তাকানোর সময় নেই।

সমমনাদের নিয়ে টানা কর্মসূচিতে বিএনপি : চলমান আন্দোলনের তীব্রতা বাড়াচ্ছে বিএনপি। সর্বস্তরের নেতা-কর্মী মাঠে নেমে রাজপথে শক্ত অবস্থান নিতে যাচ্ছে। আসছে লাগাতার আরও কঠোর কর্মসূচি। দুই সপ্তাহের বেশি টানা অবরোধ কর্মসূচির পর আগামী রবি ও সোমবার টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে দলটি। আগামীকাল রোববার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত এ হরতাল পালন করা হবে। দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সমমনা সব দল ও জোট একই সময়ে এই হরতাল কর্মসূচি পালন করবে। যুগপৎ এর বাইরে থাকা জামায়াতে ইসলামীও দুই দিনের এই হরতাল কর্মসূচি পালন করবে। এসব কর্মসূচির মধ্যেই নির্বাচন কমিশনসহ (ইসি) গুরুত্বপূর্ণ ভবন ঘেরাও এবং অবস্থান কর্মসূচির কথা ভাবছে দলটি। সর্বশেষ অসহযোগ কর্মসূচির বিষয়টিও চিন্তায় রয়েছে তাদের। পরিস্থিতি বুঝে একের পর এক কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বিরোধী দলের আন্দোলনে এবারের ডাইমেনশন হচ্ছে-একসঙ্গে মুভমেন্ট। এত দিন যুগপৎ কর্মসূচি পালন করলেও এবার বড় বড় কর্মসূচিতে সব সমমনা জোট ও দল বিএনপির সঙ্গে একসঙ্গে মাঠে নামার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। কখন কোন্ কর্মসূচি ঘোষণা হবে- এ ব্যাপারে পর্যায়ক্রমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত কয়েক দিন ধরে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে হাইকমান্ড। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এসব বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপির আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। জনগণের বিজয় অতি সন্নিকটে। পদত্যাগ করা ছাড়া সরকারের হাতে আর কোনো অপশন নেই। তাই সরকারকে আহ্বান জানাব- টালবাহানা না করে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। আর কোনো ভোট ডাকাতির নির্বাচন বা বিনা ভোটের নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণ হতে দেবে না। সমগ্র জাতি আজ আপনাদের ঘোষিত এই একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একই পথে হাঁটছে জামায়াতে ইসলামীও। কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মতে, বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব। বিবদমান সব পক্ষকে শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। প্রতিবেশী ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন ও গণতন্ত্রের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান আবার স্পষ্ট করেছে। তাই ‘রাজনৈতিক সমঝোতা’ ছাড়া ইসি ঘোষিত একতরফা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা ‘আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোসহ দেশের জনগণ এই প্রহসনের নির্বাচনী তফসিল কিছুতেই মেনে নেবে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আন্দোলন যেখানে পৌঁছেছে, যেভাবে জনগণ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে, তাতে করে দিনে দিনে আন্দোলনের তীব্রতা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বাড়বে। তাছাড়া আর কিছুদিনের মধ্যেই তার চূড়ান্ত পরিণতি ঘটবে।
এদিকে গত কয়েক দিন ধরে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি সমমনা দলগুলোর শীর্ষনেতাদেরও মতামত নিয়েছেন বিএনপি হাইকমান্ড। নেতাদের বিশ্লেষণ হচ্ছে, তফসিল ঘোষণা করার পর টানা কর্মসূচি দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করতে হরতাল-অবরোধই কার্যকর কর্মসূচি। জেলা পর্যায়ে মহাসড়কগুলোতে পিকেটিং বাড়াবে তারা। হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি ঢাকা কেন্দ্রিক বেশ কিছু বিকল্প কর্মসূচিও দেওয়া হবে। বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের শীর্ষনেতারা বলেন, একতরফা তফসিল ঘোষণা হয়েছে, এর প্রতিবাদে দল থেকে যে কর্মসূচি দেবে, তা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে পালন করতে হবে। কেউ যদি অনুপস্থিত থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সরকার রুটিন ওয়ার্ক ছাড়া কিছু করতে পারবে না। আত্মগোপনে থাকা নেতা-কর্মীরা রাজপথে বের হয়ে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হবেন। এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে থেকেও যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগের মতোই বিরোধী দলের আন্দোলন দমানো ও নেতা-কর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করে- তাহলে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল আরও সক্রিয় হবে।

শঙ্কা থাকলেও ভোটের প্রস্তুতি জাতীয় পার্টির
শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেবে। শনিবার বা রবিবার থেকেই দলীয় মনোনয়র ফরম বিক্রি শুরু হবে। দলটির একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। যদিও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর এখনো প্রকাশ্যে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেননি দলটি। দলটির একপক্ষ তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে।
অপর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু ভোট হবে কি না তা নিয়ে তাদের শঙ্কা রয়েছে। প্রকাশ্যে দলের নেতারা যত কথাই বলুক না কেন ভিতরে ভিতরে নির্বাচনে যাওয়ার সব প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারকরা জানান, সরকার ও বিদেশি বন্ধুদের চাপ উপেক্ষা করে নির্বাচন বর্জন করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া রয়েছে দল ভাঙার ভয়ও। কারণ ইতোমধ্যেই দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির তৃণমূলের নেতারা বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন বর্জনের পক্ষে। গত মঙ্গলবার জাপার কেন্দ্রীয় কমিটি এবং জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সভায় ৫৯ নেতার দুজন বাদে সবাই বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তারা থাকতে চান না। ওই সভায় অনেক আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে। এখন পর্যন্ত দলের মধ্যে প্রকাশ্যে যত কথাই হোক না কেন, ভিতরে ভিতরে নির্বাচনের অংশ নেওয়ার সব প্রস্তুতি চলছে। খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেবে দলটি। সেই সঙ্গে আগামী শনিবার বা রবিবার থেকে দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রিও শুরু হবে বলে দলের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। জাপার দায়িত্বশীলরা বলছেন, নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আরেক কারণ দলের ভাঙন ঠেকানো। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেছিলেন দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কিন্তু রওশন এরশাদকে সামনে রেখে দলের একাংশ বিএনপিবিহীন সেই নির্বাচনে অংশ নেয়। জাপার একজন কো-চেয়ারম্যান বলেছেন, তৃণমূলের নেতারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিপক্ষে হলেও দলের ২৩ এমপির অধিকাংশ ভোট বর্জনের বিপক্ষে। জি এম কাদের নেতৃত্বাধীন জাপা নির্বাচন বর্জন করলে দলের বহু নেতা এমপি হওয়ার প্রলোভনে রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ভোটে অংশ নেবেন। সরকারের সমর্থন থাকায় রওশনপন্থিদের হাতে দলের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে। রওশনপন্থিরা এ সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন। ৪ নভেম্বর জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বাসায় জি এম কাদেরের সভাপতিত্বে কো-চেয়ারম্যানদের বৈঠক হয়। অধিকাংশরাই নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে মত দিয়েছেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আওয়ামী লীগকে বার্তা দেওয়া হবে জি এম কাদেরের একক নেতৃত্বে জাপা নির্বাচনে অংশ নেবে। সরকার আসন ভাগাভাগিসহ নির্বাচনের সব বিষয় জি এম কাদের গ্রুপের সঙ্গেই ফয়সালা করতে হবে। জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া জানান, বুধবার রাত পর্যন্ত জাতীয় পার্টির নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। তবে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানান তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ