পাইকগাছা(খুলনা) প্রতিনিধি:
ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশে আছি, তারই পরিক্রমায় কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি। “ও বউ ধান ভানে রে ঢেঁকিতে পার দিয়া” এক সময় ঢেঁকির পাড়ে পল্লীবধূদের এমন গান বাংলার গ্রামীন জনপদে সবার মুখে মুখে শুনা যেতো। ধান থেকে চাল, চাল থেকে আটা। এক সময়ে চাল আর আটা তৈরির একমাত্র মাধ্যম ছিল এই ঢেঁকি। নবান্ন এলেই ধুম পড়তো নতুন ধানের চাল ও আটা তৈরীর। আর শীতের পিঠা তৈরীর উৎসব চলতো গ্রামের প্রায় সব বাড়িতে। তবে কালের বিবর্তনে প্রায় হারিয়ে গেছে আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য বাহী এই ঢেঁকি শিল্প। নতুন প্রজন্মের কাছে তো ঢেঁকি এখন একটি অচেনা শব্দ। বাস্তবে এখন ঢেঁকির দেখা মেলা ভার। কিছু জায়গায় থাকলেও এর ব্যবহার এখন আর তেমন একটা নেই। নব্বই দশকের পর থেকে ক্রমেই বিলুপ্তির পথে ঢেঁকি। বর্তমানে গ্রামে গঞ্জে গড়ে উঠেছে ছোট বড় রাইস মিল। যার ফলশ্রুতিতে ঢেঁকির অস্তিত্ব আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। ঢেঁকি ছাটা চাল ও চিড়া আজ আর নেই। এখন আর আগের মতো ঢেঁকিতে ধান ভানার দৃশ্য চোখে পড়ে না। ভোরের স্তব্ধতা ভেঙে শোনা যায় না ঢেঁকি ঢেঁকুর ঢেঁকুর শব্দ। চোখে পড়ে না বিয়ে-শাদি উৎসবে ঢেঁকিছাটা চালের ক্ষীর ও পায়েস রান্না। একসময় ঢেঁকিতে তৈরী করা আটা দিয়ে ঘরে ঘরে প্রস্তুত হতো পুলি, ভাপা, পাটিসাপটা, তেলে ভাজা, চিতইসহ নানা ধরনের বাহারি পিঠা-পুলি। পিঠার গন্ধ ছড়িয়ে পড়তো এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপন করা হতো নবান্ন উৎসব। গ্রামীণ জনপদ গুলোতে এখন বিরাজ করছে শহুরে আবেশ। তাই গ্রামে গ্রামে আর ঢেঁকি নেই, নেই পল্লীবধূদের মন মাতানো গান। কিছু জায়গায় নবান্ন উৎসব হলেও পিঠা-পুলির সমাহার আর চোখে পড়ে না। গ্রাম বাংলার এমন চিরায়ত সব ঐতিহ্য এখন শুধুই স্মৃতি।