সম্প্রতি বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আগত নেতাকর্মীদের মোবাইল ফোন তল্লাশির ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, নিরাপত্তার স্বার্থে নেতাকর্মীদের মোবাইল ফোনের গ্যালারি, হোয়াটসঅ্যাপ ও কল লিস্ট চেক করেছে দায়িত্বরত জেলা পুলিশের সদস্যরা। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে— পুলিশের এমন কর্মকাণ্ড কতটা আইনসঙ্গত?
সাংবিধানিক অধিকার বিবেচনায় দেশের প্রতিটি নাগরিক স্বাধীন। প্রতিটি নাগরিকের রয়েছে স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার। ক্ষেত্র বিশেষে ব্যতিক্রম ছাড়া এই অধিকার খর্ব করার ক্ষমতা কারও কাছেই ন্যস্ত করা হয়নি। আবার রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করাটাও সরকারের দায়িত্ব। তবে অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে যদি অধিকার খর্ব করা হয় তবে সে বিষয়টি সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে আইনের দৃষ্টিতে সকল নাগরিক সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী, ৩২ অনুচ্ছেদে আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে কোনও ব্যক্তিকে বঞ্চিত না করা, ৩৬ অনুচ্ছেদে চলাফেরা এবং ৩৭ অনুচ্ছেদে সমাবেশের স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, মোবাইলটি এখন আর শুধু কথা বলার যন্ত্র নয়। এখন ক্যামেরা, ইমেইল করাসহ যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মাধ্যম হয়ে উঠেছে মোবাইল ফোন।
তিনি বলেন, তবে মোবাইল চেক করা যাবে, যদি কোনও সুস্পষ্ট অভিযোগ-সন্দেহ বা মামলা থাকে। যেমন ধরুন, আমি নিজে বা অন্য কেউ আমার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে যদি কোনও অপরাধ করে তখন তল্লাশি করা যাবে। অন্যথায় কখনোই কারও মোবাইল ফোন তল্লাশি করা যাবে না। কিন্তু বাংলাদেশে এমন কোনও আইন নেই যে কোনও ব্যক্তি বা পথচারীর মোবাইল চাইলে সরাসরি তল্লাশি করতে পারে। এসব আমাদের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থি কাজ। যা করা হচ্ছে তা নীতি-নৈতিকতা এবং আইনের লঙ্ঘন করেই করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা জেলা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কোনও সভা-সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় যানবাহনে তল্লাশি করে থাকে পুলিশ সদস্যরা। তবে মোবাইল চেক করার কোনও নির্দেশনা পুলিশ থেকে দেওয়া হয় না। ব্যক্তিগত জিনিসপত্র এবং মোবাইল ফোন ঘেঁটে না দেখার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়ে থাকে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মোবাইলে তল্লাশি করা সম্ভব কিন্তু এতে যেন ওই ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসান এমএস আজিম। তিনি বলেন, পুলিশের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। এজন্য তারা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু সে হস্তক্ষেপের মাত্রা কতটুকু হতে পারে তা দেখা প্রয়োজন। মূলত বিষয়টি নির্ভর করছে হস্তক্ষেপের মাত্রার ওপরে। এক্ষেত্রে কারও মোবাইল থেকে যদি তার গ্যালারি, ব্যক্তিগত বিষয়, ব্যাংক ডিটেইলসহ প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয়ে ঘাঁটাঘাটি করা হয়, তবে তা মোটেও বৈধ হবে না।
প্রতিকার সম্পর্কে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, কেউ এমন ঘটনার শিকার হলে ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে, জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। যে কোনও বাহিনী বা তাদের সদস্যরা ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় কোনও অপরাধ করলে তা আইনগতভাবে বৈধ হয়ে যাবে না। আবার এসব পোশাক পরে পুলিশ যে অপরাধ করবে না তাও তো নয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকরা ক্ষতিপূরণ চেয়ে অবশ্যই আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবে।