• শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৬ অপরাহ্ন

শেষ মুহূর্তে বেড়েছে কামারদের ব্যস্ততা

স্বাধীন ভোর ডেস্ক / ৬১ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় সোমবার, ২৬ জুন, ২০২৩

খান মোহাম্মদ রুবেল হোসেন (লালমাই),কুমিল্লা:
কুমিল্লা লালমাই উপজেলার কামাররা ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান গুলোর মধ্যে ঈদুল আযহা সবচেয়ে বড় আয়োজনে তথা ভাবগম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে পালন করা হয়। এ বছরের ঈদুল আযহা আর মাত্র বাকি কয়েকদিন। আগত ঈদুল আযহার আনন্দ যেন সবার ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছে। আর এই ঈদকে সামনে রেখে কোরবানীর পশু জবাইয়ের অন্যতম উপকরণ চাকু, দা, ছুরি, বটি, চাপাতিসহ লোহার বিভিন্ন সামগ্রীর চাহিদা বেড়েছে। আর এসব তৈরিতে শেষ মুহুর্তে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন পেশাদার কামার শিল্পীরা। তারা যেন দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না। কোরবানী ঈদে চাকু, ছুরি, চাপাতি, বটি, কাঁচি, নিড়ানীর বেশি দরকার পড়ে। তখন এসব তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন সব এলাকার কামাড় শিল্পীরা। কামার পাড়ার দিন-রাত টুং টাং শব্দে মুখরিত থাকে আশপাশের এলাকা গুলো। এবছরও এর ব্যতিক্রম হচ্ছেনা। দেখা গেছে, মেশিনের তৈরি লোহার যন্ত্রপাতি দেখতে সুন্দর ও দাড়ালো হয়, এমনকি দাম ও সময় অপেক্ষাকৃত কম লাগে। তাই কামারদের তৈরির চেয়ে মেশিনের তৈরি চাকু, দা, ছুরি, বটি, চাপাতিসহ লোহার বিভিন্ন সামগ্রীর কদর ক্রমেই বাড়ছে। বাপ-দাদার কর্ম ঐতিহ্য ধরে রাখতেই মূলত কিছু কামাড় এখনো এ পেশায় জড়িয়ে আছেন বলে অনেকে জানান। পরিশ্রমের তুলনায় এই পেশায় সাধারনত আয় ও সম্মান উভয়ই কম। তাই অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। কামাররা বলেন, এক সময় তাদের যে কদর ছিল, বর্তমানে তা আর নেই। এখন হাতে তৈরীর জিনিসের কদর কমে গেছে। তাই সারা বছর তেমন কোন কাজ না থাকেনা, তবে কোরবানি উপলক্ষে তাদের কাজের চাহিদা বেড়ে যায়। এসময় দৈনিক এক হাজার টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় হলেও, ব্যয় বাদে হাতে তাদের হাতে আসে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। বাগমারা বাজারের পূর্বে সওদাগর মার্কেটের একজন কামার বলেন, আমরা বাধ্য হয়েই বাপ-দাদার কর্ম ঐতিহ্যকে এখনো ধরে রেখেছি। সংসার ও ছেলে মেয়েদের পড়া-লেখার খরচ বহন করার মত যথেষ্ট টাকা আমাদের নেই, তাই কি আর করা। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক ক্রেতা প্রয়োজনীয় জিনিস কিনছেন। কামাররা এসব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মৌসুমি চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারীও বিক্রি করনে বলে জানা গেছে। অনেক ক্রেতা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার লোহার তৈরি জিনিসের দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। দা ২৫০ থেকে ১২০০টাকা, ছুরি ছোট ১৩০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা, বটি ২৫০ থেকে ১০০০ টাকা, চাপাতি ৮০০ টাকা থেকে একহাজার টাকা দরে বেচা-কেনা হচ্ছে। কামররা বলছেন, লোহার দাম ও শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় যন্ত্রপাতির দাম একটু বেড়েছে। তবে সম্প্রতি শেষ হওয়া বন্যার কারনে চাহিদা একটু কমেছে। মেশিনে তৈরি আধুনিক যন্ত্রের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও ঈদুল আযহার মৌসুমে তাদের ব্যবসা কিছুটা আলোর মুখ দেখে। তবে কামার শিল্পীরা আশংকা প্রকাশ করে বলেন, মেশিনের সাহায্যে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হওয়ার ফলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তবা এই পেশা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তখনকার প্রজন্ম কামার কে? তাদের কাজ কি? তারা কি ধরনের জিনিস বানায় বা বানাত? এবিষয়ে তারা চিনতে-জানতে পারবে না। অন্তত বাংলার ঐতিহ্য হিসেবে এই কামার শিল্পটাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারকে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ