• বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২২ পূর্বাহ্ন

আদি পেশা ছেড়ে পর্যটন ব্যবসায় নেমেছেন পদ্মা পাড়ের বহু মানুষ

স্বাধীন ভোর ডেস্ক / ৫০ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় রবিবার, ২৫ জুন, ২০২৩

উদ্বোধনের এক বছরের মাথায় পদ্মা সেতু এলাকার পর্যটন ব্যবসা এখন তুঙ্গে। যাত্রী পারাপারের পাশাপাশি দেশের সর্ববৃহৎ সেতুটি দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় করছেন। অপরদিকে পদ্মা ও মাওয়া ভ্রমণকে কেন্দ্র আগে থেকেই এই অঞ্চলে পর্যটকদের আনাগোনা ছিল। আর সেতু হওয়ায় এই অঞ্চল ভ্রমণে আগ্রহ আরও বেড়েছে।

২০২২ সালে ২৫ জুন বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে শুধু যোগাযোগই নয়, পর্যটনের পাশাপাশি শিল্প-বাণিজ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে এই এলাকার মানুষ। ভ্রমণপিপাসু ও যাত্রীদের চাহিদাকে মাথায় রেখে অনেকটাই বদলে গেছে পদ্মার দুই পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা। আদি পেশা বদল করে মাওয়া-জাজিরার অনেকেই এখন পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসা ও পেশায় নেমেছেন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় অনেকেই এখন নতুন নানা পেশায় যুক্ত হয়েছেন। তবে ট্রলারের ব্যবসা এখানে বেশ জমজমাট। দৈনিক আয় রোজগার বেশ। আবার অনেকে গড়েছেন রেস্তোরাঁ। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পর্যটকদের খাবারের জোগান দিতে অনেকে আদি পেশা ছেড়ে হোটেল ও মাছের ব্যবসা ধরেছেন।

সেতু দেখতে আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ্মা পাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য আকৃষ্ট করছে সব বয়সের মানুষকে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো দর্শনার্থীদের মনে সৌন্দর্যের নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। এর পাশাপাশি ট্রেন সার্ভিস চালু হলে এর ব্যাপকতা ও গুরুত্ব আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।

ঢাকা থেকে সেতু এলাকায় ঘুরতে আসা অধির পাল বলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণে সফলতা আমাদের জন্য অনেক গর্বের। বিশাল সেতু দেখে মন ভরে গেছে। সেই সঙ্গে পদ্মার পাড়ের ঢেউ যেন মনে দোলা দিচ্ছে। সবমিলিয়ে এক মনোরম পরিবেশ দেখে খুব ভালো লাগছে।’

নারায়ণগঞ্জ থেকে ঘুরতে আসা আবু সাঈদ বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রতীক এই সেতু। নিজ চোখে দেখে মন ভরে গেছে। তাই অবসর সময় পেলে বন্ধুদের নিয়ে এখানে বেড়াতে আসি।’

সেতু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দর্শনার্থীরা পদ্মার পাড় ও সেতুর আশপাশে নৌযানে চড়ে মন ভরে উপভোগ করছেন চারদিকের মনোরম পরিবেশ। দর্শনার্থীদের চাহিদাকে মাথায় রেখে মাওয়ার শিমুলিয়া ঘাটের আশপাশ এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় অনেক রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে।

ট্রলার ব্যবসায়ী আরিফ হালদার বলেন, ‘এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক লোকজন পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসেন। আমরা সুশৃঙ্খলভাবে ট্রলারে তাদের সুরক্ষার জন্য লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে সেতু এলাকা ঘুরিয়ে দেখাই। এতে যাত্রীদের ট্রলার প্রতি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়।’

শিমুলিয়া ঘাটের গোল চত্বর ঘিরে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক খাবার হোটেল। পেশা বদল করে রেস্তোরাঁ ব্যবসা শুরু করেছেন ইলিশ আড্ডা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট মালিক মো. দোলন খান। এক সময় তিনি কাপড়ের ব্যবসা করতেন। দর্শনার্থীদের চাহিদাকে মাথায় রেখে তিনি পেশা বদল করেছেন।

তিনি জানান, পর্যটকদের চাহিদা মতো খাবার পরিবেশন করতে ১০-১২ জন লোকও নিয়োগ করেছেন। পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর কয়েক মাস পর থেকে তার এই রেস্তোরাঁ চালাচ্ছেন। ব্যবসাও জমজমাট। প্রতিদিন তার রেস্তোরাঁয় কয়েক হাজার দর্শনার্থী ভিড় করেন।

এ ছাড়া পদ্মার পার্শ্ববর্তী শ্রীনগর, মাওয়া, সিরাজদিখান ও লৌহজং এলাকায় অনেক রিসোর্ট গড়ে উঠেছে । দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে সেসব রিসোর্টে এসে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা।

মুন্সীগঞ্জ টুরিস্ট পুলিশের জোন ইনচার্জ সাবের রেজা আহমেদ বলেন, ‘দর্শনার্থীরা সেতু এলাকায় ভ্রমণে এলে আমরা চেষ্টা করি, তারা যেন পরিবার সদস্যদের নিয়ে নিরাপদে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছতে পারে। এরপরও তারা যদি কোনও সমস্যায় পড়ে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তবে গত এক বছরে সেতু এলাকায় তেমন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাদির বলেন, ‘পদ্মা সেতুকে ঘিরে পর্যটনের বড় একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এর পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্য যে পর্যটন স্পটগুলো রয়েছে সেগুলোর জন্যও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে সুন্দরবন, বাগেরহাট ও কুয়াকাটায় কম খরচে মানুষ যেতে পারছেন। পাশাপাশি পদ্মার দুই পাড়েও নতুন নতুন স্পট তৈরি হচ্ছে। ফলে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও পদ্মা সেতু বড় একটি ভূমিকা রাখছে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ