ইদুল হাসান ফারহান,
বর্তমান সময়ের আলোচিত ও মর্মস্পর্শী ঘটনা হলো সড়ক দুর্ঘটনা। এ দুর্ঘটনায় প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছে হাজারো মানুষের প্রাণ। ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে হাজারো স্বপ্ন, নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে পরিবার। সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমানে আমাদের সৃষ্ট স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে একটি জাতীয় সমস্যা এবং নিরাপত্তার প্রধান হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৃত্যু অনিবার্য, কেউ তা থামাতে পারবে না। তবে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু যেন মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনায় ঝড়ে যাচ্ছে অসংখ্য তাজা প্রাণ। দুর্ঘটনা আকস্মিক এবং তা প্রতিদিন ঘটে না, এমন কথা এখন আর খুব একটা মানানসই না। প্রতিদিনই খবরের কাগজে ভেসে উঠছে বীভৎস সব লাশের ছবি। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হচ্ছে, আবার কেউবা পঙ্গুত্ব বরণ করছে। সড়ক দুর্ঘটনার খবর যেন আমাদের গা-সহা হয়ে গেছে। একটি দুর্ঘটনা একটি পরিবারের সারা জীবনের কান্না। এই আকস্মিক সড়ক দুর্ঘটনা ছিনিয়ে নেয় পরিবারের একমাত্র আশা অন্ন-বস্ত্রের সংস্থানকারীকে। যে মানুষটি ছিল পরিবারের একমাত্র অবলম্বন, সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু সেই পরিবারের অন্য সদস্যদের সব স্বপ্ন-আশা-আকাঙ্ক্ষা ভেঙে চুরমার করে দেয়। তাদের ভবিষ্যৎ হয়ে পড়ে অনিশ্চিত। নিহতের স্বজনদের আর্তচিৎকার আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করলেও তা যেন আমাদের বিবেককে নাড়া দিতে পারছে না। কিন্তু আমরা কি একবারের জন্যও ভেবে দেখি নিহতদের পরিবারের কথা? তারা কি ভুলতে পারে তাদের স্বজন হারানোর কথা? বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে যে, গত মে মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৯১টি। নিহত ৪০৮ জন এবং আহত ৬৩১ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৬৭, শিশু ৭৮ জন। ১৫৬টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৪১ জন, যা মোট নিহতের ৩৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১০৪ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭২ জন, অর্থাৎ ১৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাসে ৬টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত ও ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ২৫টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত এবং ৬ জন আহত হয়েছে। দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়— মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৪১ জন (৩৪ দশমিক ৫৫%), বাসযাত্রী ৬ জন (১ দশমিক ৪৭%), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রা
১. গাড়ি চালানোর সময় ড্রাইভিংয়ে মনোযোগী হওয়া এবং রাস্তার দিকে লক্ষ্য রাখা।
২.নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের জন্য রাস্তা বিশ্লেষণ বা রোড স্ক্যানিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ি চালানোর সময় রাস্তা-সম্পর্কিত কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখা সেগুলো হলো- রাস্তায় গাড়ির পরিমাণ, রাস্তার লেনের পরিমাণ, রাস্তার গঠনগত অবস্থা, রাস্তার প্রশস্ততা।
৩.সঠিক নিয়মে সিট বেল্ট বাধা। কারণ সিট বেল্ট বেঁধে গাড়ি চালানো এবং গাড়িতে চড়া দুটোই নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৪.গাড়ি চালানোর সময় কখনই হুটহাট করে গাড়ির গতিসীমা বাড়ানো বা কমানো যাবে না। কারণ হুটহাট গাড়ির গতি বাড়ানো বা কমানো প্রায়শই বড় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৫. অনেক সময় প্রতিযোগিতা করে অনেক ড্রাইভার গাড়ি চালিয়ে থাকেন। এটি একটি বিকৃত চিন্তা এবং সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
৬.গাড়ি চালানোর সময় চালক নেশাগ্রস্ত থাকার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। তাই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কখনোই গাড়ি চালাবেন না।
৭.অল্প দক্ষ চালক দিয়ে কখনোই গাড়ি চালানো ঠিক নয়। কারণ বেশি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে অদক্ষ চালকের জন্য। তাই এক্ষেত্রে গাড়ির মালিকদের সচেতন হতে হবে।
সড়ক দুর্ঘটনা এখন শুধু নিছক কোনও দুর্ঘটনা নয়। বরং অনেকাংশেই এটা দুর্যোগের পর্যায়ে চলে গেছে। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। সরকার, চালক, মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা যেন সড়ক দুর্যোগে রূপ না নিতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে, না ফেরার চেয়ে দেরিতে ফেরা উত্তম ।