মোঃইমরান
ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
শুধু মাত্র বাংলাদেশ নয়। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম জেলার মধ্যে ময়মনসিংহ অন্যতম। ১৭৮৭ সালের ১ই মে প্রতিষ্ঠিত হয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম রাজধানী ময়মনসিংহ। বাংলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতির অঙ্গনে ময়মনসিংহের লোকজ সাংস্কৃতির রয়েছে অনেক অবদান। লোকজ সাংস্কৃতি ময়মনসিংহের সাধারণ মানুষের মনে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। তার মধ্যে নান্দাইলের ঘাটুগান, ঈশ্বরগঞ্জের জারি গান, ফুলপুরের নৌকা বাইচ, কবি গান, পল্লীগীতি,পালা গান, মেয়েলী গীত, কিচ্ছা, মুর্শিদী গান ও বাউলা গান উল্লেখযোগ্য। বিশ্বসাহিত্য অঙ্গনেও ময়মনসিংহের লোকজ সাংস্কৃতির অবদান কম নয়। “ময়মনসিংহ গীতিকা” তার মধ্যে অন্যতম। যা মূলত ময়মনসিংহের লোকজ সাহিত্য ও সাংস্কৃতি নিয়েই রচিত। বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সহ অনেকের পদধূলি মিশে আছে ময়মনসিংহের মাটিতে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের যৌবনের একটি বড় সময় অতিবাহিত হয়েছে ময়মনসিংহের ত্রিশালে। তার লেখা বিখ্যাত উপন্যাস “মৃত্যুক্ষুধা” এর সূচনাও হয়েছে এই ত্রিশালে, এবং অসংখ্য কবি-সাহিত্যিকদের চরন ভূমিও এই ময়মনসিংহ। মানুষের কথা কাজ ও বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই সাধারণত লোকজ সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। সেই আদি কাল থেকেই বাংলার সাধারন মানুষ লোকজ সংস্কৃতি লালন করে আসছে। আর লোকজ সংস্কৃতি যার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেছে তা হলো কৃষি এবং বিভিন্ন ধরনের বিশ্বাস ও কর্ম। যা আবহমান কাল থেকে চলে আসছে। এখনো ময়মনসিংহের অনেক মানুষ এই লোকজ সাংস্কৃতি চর্চা করে আসছে। নান্দাইলের ঘাটুগান, ঈশ্বরগঞ্জের জারি গান, ফুলপুরের নৌকা বাইচ, কবি গান, মুর্শিদী গান, বাউলা গান ও পালা গানের এক ছোঁয়া লেগেছে ময়মনসিংহের লোকজ সংস্কৃতিতে। ময়মনসিংহের কিছু প্রচলিত প্রবাদ-বাক্য! “পরের ঘরের পিডা দাতে লাগে মিডা” “ন্যাড়া মাথা টিন-টিন এক পয়সা দে বউ কিন” “কোথায় পাবি কলসি কন্যা কোথায় পাবি দড়ি” ইত্যাদি। ময়মনসিংহের কিছু উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক সংগঠন- ময়মনসিংহের পরিচিত বেশ কিছু সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাহিত্য পরিষদ, মুক্তাগাছা সাহিত্য পরিষদ, ত্রিশাল সাহিত্য পরিষদ, হালুয়াঘাট সাহিত্য পরিষদ, উত্তরণ সাংস্কৃতিক সংসদ, ব্রহ্মপুত্র সাংস্কৃতিক সংসদ, ইলহাম সাংস্কৃতিক সংসদ, নোঙর সাংস্কৃতিক সংসদ, মিনার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদ ইত্যাদি। আঠারো শতকের পরে আধুনিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতির ঢেউ আছড়ে পড়ে ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিতে। এর ক্রমবর্ধমান পরিবর্তন হয় আশির দশকের শেষ পর্যন্ত। এতো চড়াই-উৎরাই পার হলেও ময়মনসিংহের লোকজ সাংস্কৃতি এখনো বিদ্যমান রয়েছে । এখনো এ জেলার সাধারণ মানুষ লোকজ সাংস্কৃতি চর্চা অব্যহত রেখেছে।